নির্বাচনে ভরাডুবি এবং এর জেরে দলের অভ্যন্তরে চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। মাত্র ১১টি আসন পেলেও আওয়ামী লীগের পর সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল তারাই।
৬২টি আসনে বিজয়ী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের জোট গঠন করে বিরোধী দল হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তাদের অধিকাংশই তাতে সম্মত হননি। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও দু-তিনজন বাদে সবাই আওয়ামী লীগ কিংবা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পদধারী।
নিজের দল ক্ষমতায় থাকতে বিরোধী দল হতে রাজি নন তাদের কেউ-ই। এ অবস্থায় বিরোধী দল বিষয়ে সংবিধানে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় এবারও জাপাকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। গত দুই সংসদের প্রধান বিরোধী দলকে ফের একই অবস্থানে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি রয়েছে বলেও জানা গেছে।
সংবিধান ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলের রাখতে সাংবিধানিক বা আইনগত কোনো জটিলতা নেই। এক্ষেত্রে স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। জাপা নেতারাও আশাবাদী তারা তৃতীয়বারের মতো সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসন পাচ্ছেন।
আগামী ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ওই অধিবেশনেই সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে। ৩০ জানুয়ারির আগেই বিরোধী দলের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক কালবেলাকে বলেন, ‘সংসদে বিরোধী দল কারা হবে—সে বিষয়ে সংবিধানে কোনো নির্দেশনা নেই। তবে সাধারণ ব্যাখ্যায় নির্বাচনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল যারা, তাদেরই বিরোধী দল হওয়ার কথা। সংখ্যাগরিষ্ঠরা সরকার গঠন করবে। আর দ্বিতীয় বৃহত্তম দল বিরোধী দল হবে।’
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদে ২৯টি আসন পেয়েছিল জাতীয় পার্টি। সেবার মন্ত্রিসভায় যোগ দিলেও সংসদে প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি পেয়েছিল দলটি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ২৩টি আসন পেয়ে বিরোধী দলের আসনে বসে জাপা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে আওয়ামী লীগ। ৬২টি আসনে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা— যাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতা। রাজনীতির মাঠে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়া জাপা পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হলেও ভোট টানতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি।