আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ চরম ও পরম করুণ এক অধ্যায়। এই সত্যটা সবাই জানলেও বাক্যটি শুনার সাথে সাথেই প্রজন্মের চোখে অশ্রু চলে আসেনা। এর মর্মার্থ অনুধাবণের জন্য প্রয়োজন তখনকার ঘটনাগুলো জানা। আর বিষণ্ণ স্বাধীনতা এমনই একটি মুক্তিযুদ্ধের কিছু বাস্তব ঘটনার বই। বইয়ের লেখাগুলো বেশ ঝরঝরা। তরতর করে পড়া যায়। এক শ্রেণীর পাঠকের অর্থ উদ্ধারের জন্য বেগ পোহাতে হবে- এমন কোনো পঙক্তি নেই। বইটিতে পাঁচটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে লেখক পরবর্তী কাহিনি বিস্তারের সুবিধার্তে চরিত্র পরিচয় ও ভূমিকার আশ্রয় নিয়েছেন। তবে অধ্যায়টি নিচক কথার কথা নয়। পিতৃহীন কৈশরের যন্ত্রণা ও মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের কর্মকাণ্ডকে অগ্নিদেবের খান্ডববন গ্রাস করার সাথে তুলনা করে শুরুতেই ভিতরে একটা বেদনা বেহাগ বইয়ে দিয়েছেন। পরবর্তী অধ্যায়সমূহে তিনি আরো লোমহর্ষক ঘটনার কথা জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, মাগুরা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের লুৎফর নাহার হেলেনাকে কীভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছিল। রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা দামাল ছেলে রুস্তমকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ফুটফুটে ছোট্ট বাচ্চাটিসহ নববধূ আরাকে কী কঠিন পরিস্থিতির মুখেই না পতিত করলো! লেখক মাঝে মাঝে প্রকৃতির উপমাও দিয়েছেন। অন্ধকারাচ্ছন্ন লিচু গাছ, মা পাখির ডাক তার কাছে একেকবার অর্থবহ হয়ে ওঠেছে। নরপশুরা যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গিয়েও মাওলানাদের হত্যা কঠিনভাবে করতে ছাড় দেয়নি- তা যে কোনো পাঠককে নির্বাক করে দিবে। মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেম কত প্রগাঢ় হতে পারে তাও বুঝতে সহজ হবে, যখন রোকেয়ার প্রিয়তম স্বামী জসিম জীবনের অন্তিম মুহূর্তে বলে- “স্বাধীন দেশ দেখা হলোনা। জন্মভূমির জন্য যুদ্ধ তো করা হলো।” বেঁচে থাকার জন্য প্রাণকে আশ্রয় দিতে লেখকের দেহকে তাঁর বাবা ও অন্যান্যরা কত জঙ্গল আর পথ মাইলের পর মাইল হেঁটে কেমন সময় যাপন করেছেন- তারও বর্ণনা আছে। একবার অনেকের সাথে লেখক গুহায় আশ্রয় নিয়েছেন। পাশে তাঁর আপার কোলে বাচ্চাটি কাঁদতে থাকলে পাশ থেকে আরেকজন বলছিলেন- আপনার বাচ্চাটিকে গলা টিপে মেরে ফেলুন। নতোবা ওর কান্নার শব্দে মিলিটারিরা আমাদের দেখে ফেলবে। আর আমরা সবাই মারা যাবো। বাচ্চাটিকে আপনি না মারতে পারলে আমার কাছে দিন। এমন সব বাস্তব অশ্রুকাহিনীর নিবদ্ধই সাদিকুল আওয়াল এঁর বিষণ্ণ স্বাধীনতা।
‘বিষণ্ন স্বাধীনতা’ বই অর্ডার করুন Jolpore.com
@followers 01747-695765 #books #bagladesh