বাঙালির জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য সবচেয়ে বেশি। কেননা অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে এই দিনটি আমাদের পাওয়া। আজকের এই দিনটি সমগ্র দেশবাসীর বহুকালের লালিত স্বপ্নের ফল।স্বাধীনতা এমনি এমনি অর্জন করা যায় না। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি স্বাধীন জাতি তাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছে রক্তের বিনিময়ে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ তারিখে পালিত হয়। তবে এ স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে রয়েছে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের গৌরবােজ্জ্বল ইতিহাস। দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী রক্ত ক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। এবং এই দিনটিকে আমরা স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করি। এবং এই স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মুক্ত হয় বিদেশি শাসন-শােষণ, নির্যাতন-নিপীড়নের হাত থেকে। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঙালি জাতির প্রেরণা হয়ে থাকবে চিরদিন। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি জাতি থাকবে, ততদিন এ চেতনাই হবে বাঙালি জাতির সার্বিক উন্নতির মূলমন্ত্র।২৬ মার্চ বাঙালির আত্মপরিচয়ের গৌরবে উজ্জ্বল, ত্যাগে ও বেদনায় মহীয়ান একটি দিন। নিপীড়িত, বঞ্চিত ও শােষিত মানবের মুক্তির স্বপ্নসাধ পূরণের মহিমায় অমর এ দিন।স্বাধীনতা দিবস অর্থাৎ ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘােষণা অকস্মাৎ সৃষ্ট কোনাে আবেগময় ঘােষণা নয়। এর পেছনে রয়েছে বাঙালির আত্মত্যাগ, আত্মবিসর্জন ও আন্দোলন-সংগ্রামের সুদীর্ঘ রক্তাক্ত পথ। এই অমসৃণ পথ পাড়ি দিয়ে এই দিনে বাঙালি জাতি আরেক রক্তাক্ত পথে চলতে শুরু করল। অতঃপর দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ, সংগ্রাম, মৃত্যু, লাঞ্ছনা ও চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা লাভ করি বিজয়। হাতে পাই সবুজ-লালের মিশ্রণে তৈরি একটি পতাকা, একটি গর্বিত ভূখণ্ড।স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সমস্ত জাতি একসাথে হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র সংগ্রামে।আনন্দ-বেদনার মহাকাব্য যেদিন থেকে চিরকালের জন্য বইতে শুরু করল বাঙালির বুকে, মহান সেই স্বাধীনতা দিবসের । স্বাধীনতার এই দিনে বাঙালি জাতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে দেশমাতৃকার জন্য আত্মদান করা বীর সন্তানদের। স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার এই সময়টি জাতি নিবিড় আবেগের সঙ্গে স্মরণ করে।মহান স্বাধীনতা দিবস বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যময়। সামরিক শাসন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফার আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনসহ নানা ঘটনাপ্রবাহের ভেতর দিয়ে এগিয়ে আসে একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের আহ্বানে জেগে ওঠে নিরীহ বাঙালি। যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে তারা শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নেয়। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় চালায় বর্বর গণহত্যা। ওই রাতেই গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু। তার আগেই বার্তা পাঠিয়ে দেন স্বাধীনতার ঘোষণার। এরপর গঠিত হয় প্রবাসী সরকার। তাদের নেতৃত্বে সংগঠিত রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধ।বহু ত্যাগ এবং তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তাই স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য তরুণ/তরুণীদের জন্য আমি ক্ষুদ্র কলাম লেখক কবির নেওয়াজ রাজ আজকের এই নিবন্ধে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জন ও অসাম্প্রদায়িক, কল্যাণমুখী, মানবিক, প্রগতিশীল স্বতন্ত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। মানুষের মৌলিক অধিকার ও ন্যায়সংগত অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় প্রতিষ্ঠা, শোষণ, বৈষম্য, অন্যায়ের অবসান ঘটিয়ে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।
লেখকঃ কবির নেওয়াজ রাজ
এমএসএস” রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সিসি”জার্নালিজম,এলএলবি।