আজ শুক্রবার (১০ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসবের ২য় দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব আয়োজন করেছে।
এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত পনেরো বছরে অর্থনৈতিক দিক থেকে ও অবকাঠামো উন্নয়নের জায়গায় আমরা অনেক অর্জন করেছি, সামনে আরও এগিয়ে যেতে হবে। তবে আগামী দিনগুলোতে সংস্কৃতির জন্য আরও বিনিয়োগ দরকার। শুধু অর্থের বিনিয়োগ নয়, আমাদের আরও বেশি প্রচেষ্টা, সময়, শ্রম ও মেধা এখানে বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ সংস্কৃতিতে বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে একটি উদারনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশের একটা মূল্যবোধের জায়গা তৈরি হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, আমাদের দারিদ্র্য কমছে, দেশের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা সবকিছুতে উন্নততর জীবনের দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু একইসাথে মূল্যবোধের উন্নয়নের জন্য, এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংস্কৃতিতে বিনিয়োগ প্রয়োজন। রবীন্দ্র সংগীত এবং আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির যতো আয়োজন গোটা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিতে হবে। সেজন্য সরকার সব ধরণের সহযোগিতা করতে চায়। কারণ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের জন্য সাংস্কৃতিক আন্দোলনের, সাংস্কৃতিক আয়োজনের কোন বিকল্প নেই।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে রবীন্দ্র সংগীত, আমাদের রাজনীতি, বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জন্ম, বাংলাদেশের বিকাশ হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে অতীতে ও বর্তমানে, ভবিষ্যতেও হাঁটবে।
তিনি আরও বলেন, বাঙালিরা একটা স্বাধীন সত্তার কথা চিন্তা করলো এবং সবার প্রথমে ফুঁসে উঠলো অর্থনৈতিক বৈষম্যের জন্য নয় বা অন্য কোনো রাজনৈতিক কারণে নয়। যখন সবার প্রথমে আমাদের ভাষার ওপর আঘাত হানা হলো এবং বলা হলো রবীন্দ্র সংগীত গাইতে দেবে না, তখন সবার প্রথম বাঙালিরা ফুঁসে উঠেছিল পাকিস্তানিদের বিপক্ষে এবং তখন ধীরে ধীরে বাঙালিরা চিন্তা করলো একটা নিজস্ব স্বাধীন আবাসভূমি দরকার যেখানে আমরা রবীন্দ্র সংগীত গাইবো, নজরুল গীতি গাইবো, আমাদের মতো করে আমাদের সংস্কৃতির চর্চা করবো। সেই বাস্তবতা থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়া, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ। কাজেই রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্র সংগীত এবং বাংলাদেশের অস্তিত্ব একেবারে নিবিড়ভাবে একই অঙ্কুরে গাঁথা। যে কারণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রবীন্দ্রনাথের একটি গানকেই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত করেছেন।
তিনি আরও যোগ করেন, রবীন্দ্র সংগীত নিয়ে যে উৎসব, রবীন্দ্র সংগীতকে ঘিরে যে আয়োজন সেটি শুধু শিল্প ও সংস্কৃতির অংশ নয়, এটি একটি আন্দোলন, একটি মুভমেন্ট। বাঙালি জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক মুভমেন্টকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং সব ধরণের উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদের বিপক্ষে উদারনৈতিক চিন্তা আরও বিস্তৃত করার জন্য রবীন্দ্র সংগীত, রবীন্দ্র সংগীতকে ঘিরে এই আন্দোলন আরও সামনে এগিয়ে নেয়া প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বরেণ্য রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ইফফাত আরা দেওয়ান-কে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা সম্মাননা, ১৪৩১ প্রদান করা হয়।
এর আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ড. মকবুল হোসেন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এবং সংস্থার সভাপতি সাজেদ আকবর অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।