শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

দেবহাটায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে  কেন্দ্র ও আশপাশ প্রভাবমুক্ত রাখতে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৯.১৬ এএম
  • ২৭ বার পঠিত
দেবহাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: মঙ্গলবার রাত পোহালেই দেবহাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ২১ মে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ২য় ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ভোটগ্রহন উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এরই মধ্যে রবিবার রাত থেকে শেষ হয়েছে প্রার্থীদের সকল প্রকার প্রচার-প্রচারণা। তবে ভোট দেওয়া নিয়ে উদ্বেগ আর সংশয়ের কথা জানিয়েছেন ভোটাররা।
সারাদেশের ন্যায় সাতক্ষীরা জেলায় ২য় ধাপে দেবহাটা, তালা ও আশাশুনি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কুলিয়া, পারুলিয়া, সখিপুর, নওয়াপাড়া ও দেবহাটা সদর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। যার আয়তন ১৭৬.৩৩ বর্গ কিলোমিটার যা ৬৮ বর্গমাইলের সমান। এই উপজেলায় জনসংখ্যা ১,৫১,৭১৭ জন। বর্তমানে মোট ভোটার রয়েছেন ১ লক্ষ ১১ হাজার ৫২৭ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৬ হাজার ৫৫ জন। মহিলা ভোটার ৫৫ হাজার ৪৭১ জন। এছাড়া এক জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন এই উপজেলায়। এদিকে ৪০ টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহন উপলক্ষে ইতোমধ্যে ভোট গ্রহনে নিয়োজিতদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রায় সব কয়টি কেন্দ্র। তবে প্রশাসন বলছেন কোন প্রকার অনিয়ম বা অবৈধ সুযোগ দেওয়া হবে না। ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালেট পেপার দেওয়া হবে। এর আগে আজ সোমবার কেন্দ্রে ব্যালেট পেপার বাদে বাকি সব মালামাল প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তা।
এদিকে, নির্বাচনকে ঘিরে পাড়া, মহল্লা, বাজার, চায়ের দোকানে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। এ বারের নির্বাচনে দেবহাটা উপজেলায় ৫জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ২ জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ২ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। যার মধ্যে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও  উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবর রহমান (মোটরসাইকেল) প্রতিক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও  উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. গোলাম মোস্তফা (চিংড়ি মাছ) প্রতিক, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল ইসলাম (আনারস) প্রতিক, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি আবু রাহান তিতু (ঘোড়া) প্রতিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদাউস আলফা (হেলিকপ্টর) প্রতিক নিয়ে লড়ছেন। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সবুজ (তালা) প্রতিক, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় ঘোষ (টিউবওয়েল) প্রতিক এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জিএম স্পর্শ (কলস) প্রতিক ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আমেনা রহমান (ফুটবল) প্রতিক নিয়ে লড়ছেন।
তবে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভোট দেওয়ার আগ্রহ কম থাকায় সবার চোখ আওয়ামী লীগের ভোটার ও হিন্দু সম্প্রদায়ের দিকে। আর তাই সব প্রার্থীরাই এখন কেন্দ্রে ভোট কেন্দ্র ভোটার আনতে বিভিন্ন চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। এরমধ্যে ভোটারদের মাঝে সংশয় কাজ করছে যে সুষ্ঠ ভাবে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে কিনা? নিজের ভোট নিজে প্রদান করতে পারবেন কি না? এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পার করছেন তারা। ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেশি হওয়ায় দলীয় ভোট কয়েক অংশে ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আর এতে অনেকটাই নির্ভর করছেন জামায়াত-বিএনপি’র ভোটের উপর। যেহেতেু মাঠে তাদের প্রার্থী না থাকায় জামায়াত-বিএনপি’র ভোটারগন ভোট দিতে না যাওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে। এরমধ্যে উপস্থিত ভোটারদের প্রদানকৃত ভোটে মুজিবর রহমান, আল ফেরদাউস আলফা ও রফিকুল ইসলাম এর সাথে প্রতিদ্ব›দ্বীতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এসব প্রার্থীদের মধ্যে মুজিবর রহমান বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব থাকায় তিনি পুন:রায় জয়ের আশীবাদি। কিন্তু উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের মুখে মুখে আলফার নাম শোনা যাচ্ছে। তাই এবারের ভোটে নতুন চমক আসতে পারে বলে ধারনা করছেন অনেকেই। আর সেই সাথে আওয়ামী লীগের মুলধারার একটি অংশের আল ফেরদাউস আলফা’র সমার্থন করায় জয়ের আশা করছেন ভোটাররা। এছাড়া আল ফেরদাউস ব্যক্তিগত অর্থায়নে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে অসহায় মানুষের বাড়িঘর নির্মান ও সহযোগীতা করে আসায় তাদের তার জনপ্রিয়তা রয়েছে বেশ। অপরদিকে মুজিবর রহমানের দীর্ঘদিনের রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধির অভিজ্ঞতায় তার সমার্থকরা জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। আর সেই সাথে রফিকুল ইসলাম বিগত উপজেলা নির্বাচনে মুজিবর রহমানের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী হয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তাই তাকেও ছোট করে দেখছেন না ভোটাররা। অপরদিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও  উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. গোলাম মোস্তফা পুরানো অভিজ্ঞতা ও জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঝে ছুটে চলেছেন। সেই সাথে প্রথমবারের মত নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয় আশায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি আবু রাহান তিতু। এছাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বিগত দিনে সববয়সী মানুষের মনে স্থান করে নেওয়ায় তার জয়প্রিয়তা এগিয়ে রয়েছেন বলে ধারনা ভোটারদের। তিনি ব্যাপক ভোটে জয় হওয়ার আশা দেখছেন ভোটাররা। অন্যদিকে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার ঘোষ বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে মাঠে নামলেও প্রতিদ্ব›দ্বীতার আগে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। কিন্তু এবার সরাসরি ভোট যুদ্ধে প্রথম মাঠে নেমে জয়ের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জিএম স্পর্শ বিগত বছরগুলোতে প্রাকৃতিক দূর্যোগ, করোনাকালীন মানুষকে সচেতন ও সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছেন। সে কারণে কর্মী-সমার্থক ও ভোটাররা তার জয়ের আশা দেখছেন। আর তার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিগত নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এবার জয়ের লক্ষে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। সব মিলে ভোটার উপস্থির উপর নির্ভর করছে উপজেলা নির্বাচনে ভাগ্য নির্ধারণ।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক ভোটার জানান, ভোট কেন্দ্রে যেতে যদি কোন বাঁধা না দেওয়া হয় কিংবা নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন তাহলে তারা ভোট দিতে যাবেন। আর যদি কোন প্রভাবের মুখে পড়তে হয় তাহলে ভোট দিতে যাওয়া না যাওয়া সমান হবে। তাই প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন তারা। পাশাপাশি ভোট কেন্দ্র করে হিন্দু বা বিশেষ শ্রেণির মানুষকে তার্গেট করে যাতে হামলা বা সহিংস কর্মকান্ডে শিকার না হতে হয় সেটিও গুরুত্বের সাথে দেখার কথা জানান তারা।
এদিকে নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবর রহমান জানান, আমি বিগত দিনে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেছি। জনগন আমার সাথে আছে আমি আশা করি জয়ী হব। জনগন আমাকে আবারো বিপুল ভোটে জয়ী করবেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী আল ফেরদাউস আলফা জানান, সাধারণ মানুষ চাই আমি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জয়ী হই। আশাকরি মানুষ ভোটকেন্দ্রে আসতে পারলে আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে। আমি জয়ী হলে সরকারি সম্পদের যথাযর্থ ব্যবহার করবো।
চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু রাহান তিতু জানান, আমি নতুন হওয়ায় প্রথমে পরিচিত কম ছিল। যতই দিন গড়াচ্ছে ততই আমার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আমি নির্বাচিত হলে শতভাগ দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাব। ভোট মানুষের অধিকার তাই কেউ প্রভাব বিস্তার করলেই তা প্রতিরোধ করা হবে। তিনি অভিযোগ করেন যে, কোথাও কোথাও প্রার্থীর পক্ষে প্রতিকের ছবি সহ ভোটার ¯িøপ প্রদান করা হচ্ছে যা নির্বাচনের আইনের বাহিরে।
তবে প্রচারনার শেষ দিনে গনসংযোগে ব্যাস্থ থাকায় চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাড. গোলাম মোস্তফা ও রফিকুল ইসলাম এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী মাহামুদ হোসেন জানান, ভোট গ্রহনের সব ধরণের প্রস্তুতি শেষ। সোমবার সকল মালামাল ও দায়িত্বপ্রাপ্তরা ভোট কেন্দ্রে যাবেন। ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার কেন্দ্রে পৌঁছানো হবে। কোন প্রকার অনিয়ম করতে দেওয়া হবে না।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষে ইসির নির্দেশ মোতাবেক ধাপে ধাপে সব কাজ করা হচ্ছে। ভোটের দিন প্রতিটা ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। উৎসবমুখর ভাবে ভোটগ্রহন সম্পন্ন করতে মাঠে কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন। ভোট নিয়ে কোন রকম অনিয়ম হলেই সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
21222324252627
282930    
       
  12345
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
2930     
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com