হেলাল আহমদ : সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলায় জমে উঠেছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।
সর্বত্রই চলছে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা সমালোচনা ও চুলচেড়া বিশ্লেষণ। গ্রামে, গঞ্জে, হাটেঘাটে এমনকি চায়ের দোকানেও এ নিয়ে ভোটারদের মাঝে আগ্রহের কমতি নেই। চলছে আশাবাদি হিসাব নিকাশ।
সকল প্রার্থীই বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদি। তাহলে কে হচ্ছে বালাগঞ্জ উপজেলার নতুন অভিভাবক?
এমন অনেক প্রশ্নই উপজেলার কর্মী, সমর্থক, ভোটারদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৯মে বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই যেন বাড়ছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা ও দৌড়ঝাঁপ।
যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। কাপ পিরিস, আনারস, ঘোড়া প্রতিকের প্রার্থীরা রাতকে দিন আর দিনকে রাত মনে করে উপজেলার এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলেছেন। নেতাকর্মীদের সরব পদচারণায় বালাগঞ্জ উপজেলা এখন উৎসব মুখর নির্বাচনী পরিবেশ। তবে অনেক সাধারণ ভোটারদের মাঝে চাপা নিরবতা উপলব্ধি করা গেছে।
২৯মে বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিন জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদে বালাগঞ্জ বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তকুর রহমান মফুর (কাপ পিরিস), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনহার মিয়া (আনারস), বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সামস উদ্দীন সামছ(ঘোড়া)।
এছাড়াও রয়েছে ৫জন বালাগঞ্জ উপজেলার পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাওলানা সৈয়দ আলী আছগর (বৈদ্যুতিক বাল্ব), ভাইস চেয়ারম্যান পদে মুস্তাক উদ্দিন আহমদ চশমা, মোঃ মশাহিদ আলী তালা ও নুরে আলম মাইক প্রতীক, মুফতি জাকারিয়া জাবের( টিডবওয়েল)এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ২জন প্রার্থী বর্তমান সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সেবু আক্তার মনি ফুটবল ও অর্পনা রানী দেব কলস প্রতীক ।
রবিবার (২৬মে) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, অলিগলি রাস্তার মোড়,চায়ের স্টোলে লোক সমাগম বেশি। নিশি রাতেও পাড়া মহল্লায় প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের আনাগোনা। চলছে সাউন্ড সিস্টেম,মাইক বাজিয়ে প্রচার প্রচারণা। বিরামহীন সময় পার করছেন তারা। প্রার্থীদের নির্বাচনী ফেস্টুন, লিফলেট,পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে উপজেলার সবকটি এলাকা। দমে নেই কর্মী সমর্থকরা। মিছিল, মিটিং বক্তব্যের বুলিতে নিজ প্রার্থীগণের পক্ষে জয়গান করছেন তারা।ভোটাররাও নির্বিঘ্নে তাদের সত্য মিথ্যা কথার শ্রোতা হচ্ছেন।
কয়েকজন ভোটার জানান, “প্রার্থীরা তাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। প্রতিদিন প্রার্থীদের ডাকে রাতের ঘুম তাদের হারাম হচ্ছে। নির্বাচিত হলে প্রার্থীরা এলাকার সব রকম উন্নয়ন ও সকল সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দিচ্ছেন”।
একজন ভোটার বলেন, “নির্বাচন এলেই প্রার্থীরা ভোট চাইতে আসেন। হাতে পাঁয়ে ধরেন, মাথায় হাত বুলায় কিন্তু ভোট চলে গেলে এসব নেতাদের আর পাত্তা পাওয়া যায়না। তাঁদের কাছে গিয়ে সমস্যার কথা বলা সম্ভব হয় না”।
অপর এক ভোটার বলেন, “যে প্রার্থী আমাদের খোঁজখবর নিবেন, এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন, আমরা তাকেই ভোট দেব”।
ভোটাররা আরো বলেন, “প্রার্থীদের মধ্যে যাকে উপজেলার অভিভাবক হিসাবে নিরাপদ মনে হবে আমরা তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে চাই”।
বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী “কাপ পিরিস” প্রতিকের প্রার্থী বালাগঞ্জ বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তকুর রহমান মফুর, তার বক্তব্যে বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম এবং বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরে যেভাবে মানুষের পাশে থেকেছি। জনগণের সুখ দুঃখের ভাগিদার হয়েছি। বালাগঞ্জ উপজেলার যে উন্নয়ন করেছি সেই উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতেই জনগণ আমাকে নির্বাচিত করবেন”।
বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী “আনারস” প্রতিকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনহার মিয়া তার বক্তব্যে বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং যেভাবে মানুষের পাশে থেকেছি। জনগণের সুখ দুঃখের ভাগিদার হয়েছি। বালাগঞ্জ উপজেলার যে উন্নয়ন করেছি সেই উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতেই জনগণ আমাকে নির্বাচিত করবেন”
ঘোড়া প্রতিকের প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সামছ উদ্দীন সামছ তার বক্তব্যে বলেন, আমি গত পাচ বছর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলাম বালাগঞ্জ উপজেলার যে উন্নয়ন করেছি সেই উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতেই জনগণ আমাকে নির্বাচিত করবেন”।
অন্য প্রার্থীগণও তাদের নিজ নিজ উন্নয়নের কথা বলে বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদি।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে , “বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫জন ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩৮৯জন এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৩০ হাজার ১২৬জন ও মহিলা ১ লাখ ২৮ হাজার ২৬২জন । ৯৫টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে”।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৯ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।