শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকার পুণর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘আমার ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা একদিন দেশ স্বাধীন করেছিলেন তার বাস্তবায়নই আমার একমাত্র লক্ষ্য।’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার বিকেলে (স্থানীয় সময়) লন্ডনের কেন্দ্রস্থলের ওয়েস্ট মিনিস্টার এলাকার বিখ্যাত সেন্ট্রাল হলে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সভায় প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।শেখ হাসিনা বলেন, তিনি তাঁর শেষ নিঃশ্বাস অবদি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাবেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা একদা বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়ন করতে আমি মৃত্যুকেও ভয় পাই না। জাতির পিতার অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণে আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস অবদি কাজ করে যেতে চাই।’জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪ততম শাহাদাৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ এই নাগরিক সভার আয়োজন করে। সভায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে সকল বয়সের প্রবাসী বাংলাদেশীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে দলে দলে যোগদান করেন এবং অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ঘন্টাখানেক পূর্বেই অনুষ্ঠানস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।হলরুম ভর্তি শ্রোতার পিনপতন নিরবতার মধ্যে শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণের শুরুতে ১৫ আগষ্ট নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার তাঁর মা-বাবা-ভাই এবং তাঁদের স্ত্রীসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের স্মরণ করেন। এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে যান।তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার খুনীদের শাস্তি না দিয়ে জিয়াউর রহমান তখন খুনীদের পুরস্কৃত করেন। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে খুনীদের শুধু দায়মুক্তিই দেননি উপরন্তু বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিলেন।’প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন এবং বিভিন্ন গণঅন্দোলনে তাদের ভূমিকারও প্রশংসা করেন।তিনি বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দেশে প্রবাসীদের আরো বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের শিল্পায়নে এবং জনগণের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা দেশব্যাপী একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। দেশের বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশের সুযোগ নিয়ে আপনারাও এখানে বিভিন্ন মিল, ফ্যাক্টরী গড়ে তুলতে পারেন।’দেশের উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,তাঁর সরকার ইতোমধ্যেই দারিদ্রের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।তিনি বলেন,‘আমরা দারিদ্রের হারকে আরো কমিয়ে আনতে চাই। যাতে এই দেশে আর কেউ গৃহহীন না থাকে, ক্ষুধার জ্বালায় যেন কেউ কষ্ট না পায় এবং কেউ যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়।’দেশের কৃষি,শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে তাঁর সরকারের সময়ের উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় থাকাতেই দেশ আজকে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।’গত ৩০ ডিসেম্বরর সাধারণ নির্বাচনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের প্রতি বিএনপি’র অনীহাই তাঁদের ভরাডুবির মূল কারণ।তিনি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছিল আর তাই তারা মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে, একটি আসনে ৫/৬ জনকে পর্যন্ত মনোনয়ন দিয়েছে।’বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের কথা স্মরণ করে সরকার প্রধান বলেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তাদের অপশাসনে এদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হয় ।তিনি বলেন, তাদের (বিএনপি-জামায়াত) নেতৃবৃন্দ সীমাহীন দুর্র্নীতি, অর্থপাচার এবং এতিমের অর্থ আত্মসাতের সঙ্গেও যুক্ত ছিল।এ সময় ২০১৩, ১৪ এবং ১৫ সালে সরকার উৎখাত এবং নির্বাচন প্রতিহতের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বিপুল সংখ্যক জনগণকে হত্যা এবং আহত করারও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।‘নারী এবং শিশু-কাউকেই তারা রেহাই দেয়নি,’ বলেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৮১ সালে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘তাঁকে এবং তাঁর বোন শেখ রেহানাকে ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর সে সময়কার শাসকরা আর দেশে ফিরতে দেয়নি।’তিনি বলেন, ‘১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর জোর করে দেশে ফিরলেও একের পর এক তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।’সম্প্রতি দেশের ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশাসন ছাড়াও তাঁর দলীয় কর্মীরা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাঠে রয়েছেন।এছাড়া দেশের দুধের মান সম্পর্কিত গুজবের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে এ সম্পর্কিত যথাযথ পরীক্ষায় গুজব ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ধরনের গুজব সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে করে এর কারণে দেশের উন্নয়ন যেন বাধাগ্রস্থ না হয়।’বিশিষ্ট সাংবাদিক কলামিষ্ট আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফ এতে সভাপতিত্ব করেন।আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী মুহম্মদ ফারুক খান এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব এবং ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।