আকিবুজ্জামিন।। ভারতে ইলিশ রপ্তানির পেছনে মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও গভীর করা। বিশেষ করে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা ঐতিহাসিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ইলিশ রপ্তানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ রপ্তানির বিশেষ অনুমতি দিয়ে থাকে, যা পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এই সময়ে ইলিশের চাহিদা মেটাতে সহায়ক হয়। দুর্গাপূজা ভারতীয়দের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি একটি সময় যখন তারা বিশেষ ধরনের খাবার, বিশেষত ইলিশ, খেতে পছন্দ করে।
এই রপ্তানি শুধু অর্থনৈতিক লাভের জন্য নয়, বরং দুই দেশের জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবেও কাজ করে। ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং এটির আন্তর্জাতিক চাহিদা রয়েছে, তবে বিশেষ করে ভারতের বাজারে এর বিশেষ চাহিদা বিদ্যমান। পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ মাছকে ঘিরে একটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যা বাঙালি ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই কারণে, ভারতের বাজারে ইলিশ রপ্তানি এক ধরনের সাংস্কৃতিক বন্ধনও তৈরি করে।
অর্থনৈতিকভাবে, ইলিশ রপ্তানি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি বড় উৎস। ইলিশ মাছ উচ্চমূল্যে বিক্রি হয় এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি আরও মজবুত হয় এবং রপ্তানি খাতের উন্নয়ন ঘটে। এছাড়াও, ইলিশ রপ্তানির মাধ্যমে ভারতের সাথে বাণিজ্যিক ভারসাম্য বজায় রাখার প্রচেষ্টা চালানো হয়।
ভারত বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার এবং ভারত থেকে বাংলাদেশ প্রচুর পণ্য আমদানি করে। ইলিশ রপ্তানি করে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি বাড়াতে সক্ষম হয়, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হয়। ভারতের বাজারে ইলিশের চাহিদা বিপুল পরিমাণে থাকে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের মতো বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। এই রপ্তানি সম্পর্ক দুই দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সহযোগিতার উন্নয়নে সহায়ক হয়।
পরিবেশগত কারণেও ইলিশ রপ্তানি নিয়ন্ত্রিতভাবে করা হয়। বাংলাদেশ সরকার ইলিশের প্রজনন মৌসুমে সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং মৎস্য সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে। নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়ে সরকার দেশীয় বাজারে ইলিশের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদাও মেটানোর চেষ্টা করে। এই প্রক্রিয়ায় ইলিশের প্রজনন, বৃদ্ধি এবং সংরক্ষণে কোন প্রকার ক্ষতি না হয় তা নিশ্চিত করা হয়।
মোটকথা, ভারতে ইলিশ রপ্তানি বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।