হাসানুর রহমান সুমন : আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ধুপখোলায় অনুষ্ঠান হয়। এতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করেন। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান ও ধন্যবাদ জানান ট্রেজারার অধ্যাপক কামালউদ্দীন আহমদ।
সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, একশ্রেণির শিক্ষক রয়েছেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। তারা সান্ধ্যকালীন কোর্স ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়ে সপ্তাহব্যাপী ব্যস্ত সময় পার করেন। এসব কাজে তারা খুবই আন্তরিক। যত অনীহা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে। তবে এ শিক্ষকরা সিলেবাস শেষ করার ক্ষেত্রে খুবই সিরিয়াস। তাই তারা তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা একসঙ্গে ক্লাস নেন। অনেক সময় ছুটির দিনে ছাত্রছাত্রীদের ডেকে এনে কয়েক ঘণ্টা ক্লাস নেন। শিক্ষার্থীরা কতটুকু বুঝল বা মাথায় নিতে পারল, সে ব্যাপারে তাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই বলে মনে হয়। সেমিস্টার ও সিলেবাস শেষ করেছেন, এ সাফল্যে তারা গর্ববোধ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও উপাচার্যদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য রয়েছে একটি নিজস্ব আইন। তাই আপনারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, উপাচার্যরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপনাদের সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। আর আপনারা নিজেরাই যদি অনিয়মকে প্রশ্রয় দিয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা কী হবে?
শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শিক্ষকতা অত্যন্ত মর্যাদাশীল পেশা। আপনারা যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, তারা মেধাবী ও বিশেষ গুণে গুণান্বিত ও দক্ষ। তাই আপনারা চাইলে অন্য যে কোনো লোভনীয় চাকরি বা পদপদবি জোগাড় করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে শিক্ষকতা পেশা হিসেবে নিয়েছেন। তাই কোনো ধরনের লোভ-লালসা ও মোহের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে পেশার প্রতি মর্যাদাশীল থাকবেন।
রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি জীবনে অনেক পরীক্ষায় ফেল করেও কখনও পাস করার জন্য নকলের মতো অনৈতিক পথ অবলম্বন করেননি। এমনকি আশপাশের কাউকে জিজ্ঞেসও করেননি। এটা তার জীবনের অহংকার এবং এটা নিয়ে তিনি গর্ববোধ করেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কিন্তু আজ শুনি শিক্ষকরা ছাত্রদের কাছে নকল সাপ্লাই করে। অনেক জায়গায় শোনা যায়, অভিভাবকরাই নকল সাপ্লাই করে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? এদের কী শাস্তি হতে পারে, ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। পরীক্ষায় নকল প্রবণতা ও অনৈতিক পন্থা অবলম্বনের কারণে দেশ ও জাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে এর বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান।
ট্রাফিক আইন মেনে চলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে মো. আবদুল হামিদ বলেন, প্রায় সাত বছর ধরে জেলখানার মতোই বঙ্গভবনে আছি। রাস্তায় স্বাধীনভাবে হেঁটে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে টেলিভিশনে দেখি, ওভারপাস আছে অথচ রিস্ক (ঝুঁকি) নিয়ে সমানে নিচ দিয়ে মানুষ পারাপার করছে। ডিসিপ্লিন (শৃঙ্খলা) না মানলে কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না। এভাবে যত্রতত্র রাস্তা ক্রস (পারাপার) করা ঠিক না। যেখানে ব্যবস্থা নেই সেখানে অন্য কথা। সবাইকে নিজে সচেতন হতে হবে এবং অন্যদেরও সচেতন করতে হবে। বিদেশিরা এসে আমাদের চাল-চলন দেখে হতাশ হয়। এজন্য সবার প্রতি অনুরোধ, বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
সমাবর্তন বক্তা ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক বলেন, এখানকার সনদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের দূত হিসেবে তাদের অর্জিত দক্ষতা দেখাবে। তার প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ধারিত হবে। আশা রাখছি, ভালো ভালো শিক্ষক সংগ্রহ অব্যাহত রেখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অল্প সময়েই সম্মানসহ বৈশ্বিক স্বীকৃতির পর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমাদের শুধু একাডেমিক শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। যখন যে বিষয় আসবে সেই বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং অন্যকে বিরত রাখতে হবে। সততা, মানবিকতা, পরমতসহিষুষ্ণতা, দেশপ্রেম এসব ধরে রাখতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে ৩৬টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটের ১৮ হাজার ৩১৭ জন নিবন্ধিত সাবেক শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১ হাজার ৮৭৭ জন স্নাতক, চার হাজার ৮২৯ জন স্নাতকোত্তর, ১১ জন এমফিল, ৬ জন পিএইচডি এবং এক হাজার ৫৭৪ জন সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থী অংশ নেন।