আকবরকে দেশের মানুষ ‘গ্রেট’ বানিয়েছে রোববার রাতে। কিন্তু অনেক আগেই যে নিজের নামের সঙ্গে ‘গ্রেট’ তকমা লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে গিয়ে ইংরেজিতে ‘আকবর দ্য গ্রেট’ লিখুন পেয়ে যাবেন। ২০১৭ সালে আকবর নামের সঙ্গে কিছু গাণিতিক সংখ্যা দিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর ইনস্টাগ্রাম-যাত্রা। কিন্তু গত বছর নাম বদলে রাখেন ‘আকবর-দ্য গ্রেট’। ভবিষ্যৎ কি আগেই দেখেছিলেন আকবর?
বিচক্ষণ অধিনায়কের বুদ্ধিদীপ্ত জবাব, ‘আমি দেখেছি পৃথিবীতে তিনজনের নামের সঙ্গে গ্রেট আছে। আকবর, আলেকজান্ডার ও অশোকা। যেহেতু আমার নাম আকবর, এই কারণেই মিলিয়ে গ্রেট লেখা। হা… হা…।’ কে জানত, ভালোবেসে তাঁকে এ নামটি ধরেই ডাকবে মানুষ!
রংপুরে বাড়ি ও পরিবার
রংপুর শহরের জুম্মাপাড়ায় বাড়ি। তিনটি কক্ষে বাস করেন আকবরের মা, বাবা ও তিন ভাই। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে আকবর সবার ছোট। বিশ্বকাপ চলাকালে গত ২২ জানুয়ারি যমজ বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে মারা যান একমাত্র বোন। আকবরের বাবা পেশায় ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী।
আকবর হয়ে ওঠা বিকেএসপিতে
বড় ভাই মুরাদ হোসেনকে দেখে ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছে জাগে আকবরের। অঞ্জন সরকারের হাত ধরে রংপুর জিলা স্কুলের মাঠে হয় একাডেমিক ব্যাটে-বলে হাতেখড়ি। তত দিনে তাঁর কানে পৌঁছে যায় নিজ জেলা ও বিকেএসপির ছাত্র জাতীয় দলের দুই ক্রিকেটার সোহরাওয়ার্দী শুভ ও নাসির হোসেনের নাম। ব্যস, মনের মধ্যে বাসা বেঁধে যায় বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন। জেলা পর্যায়ে বাছাই পরীক্ষায় নাম লিখিয়ে বিকেএসপিতে ভর্তি হন ২০১২ সালে। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের আগে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৭ দলেও। আছে বিকেএসপির বয়সভিত্তিক দলগুলোকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতাও।
এসএসসিতে এ প্লাস
ঘুম ছাড়া বেশির ভাগ সময়েই আকবরের দুনিয়ায় ব্যাট আর বল। এতে পড়াশোনা গোল্লায় যায়নি, বরং ভালো খেলার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে একাডেমিক শিক্ষা। খেলার ফাঁকে ফাঁকে বই-খাতা নিয়ে বসেই এসএসসিতে মানবিক শাখা থেকে পেয়েছেন এ প্লাস।
একজন ভালো ক্রিকেটার হওয়ার জন্য আকবরের কত পরিশ্রম। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ছুটতে হয় খেলার মাঠে। হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে হোস্টেলে ফিরে সময়মতো খাবার খেয়েই ক্লাসে হাজিরা দেওয়া। কিন্তু সকালের অমন হাড়ভাঙা খাটুনির পর কি আর বীজগণিতের সূত্রের মারপ্যাঁচ, ইংরেজি গ্রামার ঢুকতে চায় মাথায়! ঘুমে চোখ ঢুলুঢুলু হওয়ার জোগাড়। কিন্তু স্বপ্ন, পণ আর পরিশ্রমের জোরে দুটি বিষয়েই সাফল্য অর্জন করেছেন রংপুরের এই ছেলে।
২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে প্রথম বিভাগের খেলা চলছে। দুটোই চালিয়েছেন একসঙ্গে। মোদ্দাকথা, ২২ গজ সামলে পরীক্ষার হলও সামলেছেন দক্ষ হাতে। শেষ পর্যন্ত পেয়েছেন এ প্লাস। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খেলাধুলা আর পড়াশোনার সমানতালে চলে না—কথাটা আকবরকে কম শুনতে হয়নি। তিনি কীভাবে মেলালেন দুই মেরুকে? ‘আমি যখন পড়ি, শুধু পড়ার চিন্তাই করি। আবার যখন খেলি, শুধু খেলার চিন্তাই করি। যখন যেটা করি পুরোপুরি মনোযোগ দিয়ে করি। খেলার জন্য পড়ায় পিছিয়ে যাব বা পড়ার জন্য কম খেলব, এ রকম ভাবা চলবে না’—আকবর খেলা আর পড়ালেখার অঙ্কটা এভাবে হিসেব করেই মিলিয়েছেন এক বিন্দুতে।
উচ্চতা ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি
আকবরকে দেখে একটা জায়গায় খটকা লাগতে বাধ্য। ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার একটার ছেলে কিনা উইকেটরক্ষক। ভাবা যায়! তাঁর ব্যাটিং-সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এমন উচ্চতা নিয়েও উইকেটরক্ষক কেন? প্রশ্নটির জবাব আকবরকে প্রায়ই দিতে হয়, ‘আমার মেজো ভাইয়ের পরামর্শেই উইকেটরক্ষক হওয়া।’