
উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধিঃ শীতকালীন জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অ্যাথলেটিকসে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য ধরে রেখেছে। টানা ১২ বছর ধরে রেখেছে নড়াইলের পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি এ প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ইভেন্টে শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে। উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, এ ছাড়া অধিকাংশ বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক পুরস্কার পাওয়ার সাফল্যও অর্জন করেছে। জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া সমিতি প্রতি বছর এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। এ বছর ১৭ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় দিনব্যাপী কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ৪৯তম জাতীয় চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ১৭ জানুয়ারি এ প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বাছাই হয়ে চূড়ান্ত এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মাধ্যমিক পর্যায়ের সবচেয়ে বড় এ প্রতিযোগিতায় অ্যাথলেটিকসে এ বছর বালক ও বালিকা বিভাগে দৌড়, রিলে দৌড়, দীর্ঘ লম্ফ, উচ্চ লম্ফ, গোলক, চাকতি ও বর্শা নিক্ষেপ, লাফ-ধাপ-ঝাপ ও দড়ি লাফসহ ৪৩টি ইভেন্ট ছিল। ১২৯টি পুরস্কারের মধ্যে লোহাগড়া সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এ বছর পেয়েছে ১২টি পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে ৭টি স্বর্ণ, ৪টি রৌপ্য ও ১টি ব্রোঞ্জ পদক।
পদক জয়ীরা হলো রিফাতুল ইসলাম, সৌরভ বিশ্বাস, ইসমাইল, সঞ্চিতা কর্মকার, অনন্যা বিশ্বাস ও কাকলি কর্মকার। সমাপনী দিনে পুরস্কার বিতরণ করেন কুমিল্লা সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরী, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মো: আব্দুস ছালাম ও সচিব নূর মোহাম্মদ, কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান প্রমুখ।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর এই প্রতিযোগিতায় অ্যাথলেটিকসের বিভিন্ন ইভেন্টে স্বর্ণপদকসহ অধিকাংশ বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক পুরস্কার পেয়েছে বিদ্যালয়টি। ২০১৯ সালে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৮টি স্বর্ণসহ ১৫টি পদক পায়। ২০১৮ সালে ১৮টি পদক, যার মধ্যে ৯টি রয়েছে স্বর্ণ পদক। ২০১৭ সালে ১৪টি, যার ৬টি স্বর্ণ পদক। ২০১৬ সালে ১০টি স্বর্ণসহ ১৭টি পদক পায়। ২০১৫ সালে ২৩টি, যার ১৩টি স্বর্ণ। ২০১৪ সালে ৮টি স্বর্ণসহ ১৬টি পদক। ২০১৩ সালে ১০টি স্বর্ণসহ ২৬টি ও ২০১২ সালে ১৪টি স্বর্ণসহ ২৬টি পদক। ২০১১ সালে পেয়েছে ৩৪টি, যার ১৭টি ছিল স্বর্ণ। ২০১০ সালে ২৫টির মধ্যে ১৩টি স্বর্ণ ও ২০০৯ সালে ৩৯টি পদক, যার ১৯টি স্বর্ণ পদক।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম হায়াতুজ্জামান বলেন, এ সাফল্যের পেছনে রয়েছেন বিদ্যালয়ের খ-কালীন ক্রীড়া শিক্ষক দিলীপ চক্রবর্তী। তিনি অধিকাংশ অনগ্রসর ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের খুঁজে খুঁজে অ্যাথলেটিকসের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের অ্যাথলেটিকসের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তিনি তাদের প্রস্তুত করিয়ে থাকেন। এসব সাফল্যের জন্য জাতীয় স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি ।
গত বছরের অক্টোবর মাসে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকসের প্রতিযোগিতায় তাকে সেরা সংগঠকের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এ বছর স্বর্ণ পদক বিজয়ী সঞ্চিতা কর্মকার,অনন্যা বিশ্বাস ও কাকলি কর্মকার বলেন, দিলীপ স্যার অনন্য একজন ক্রীড়া সংগঠক। তার দেওয়া প্রশিক্ষণ ও উৎসাহ পেয়ে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর একের পর এক সাফল্য ধরে রেখেছে। তিনি এর জন্য আমাদের পেছনে ছায়ার মতো লেগে থাকেন এবং সব প্রতিযোগিতাস্থলে আমাদের সঙ্গে নিয়ে যান।
বুধবার দুপুরে অ্যাথলেটিকসে ধারাবাহিকভাবে সাফল্যের কারিগর ওই বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক দিলীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘নিয়মিত মনোযোগ দিয়ে অনুশীলন করলেই সফল হওয়া সম্ভব। উৎসাহীদের খুঁজে খুঁজে বের করে উৎসাহ দিয়ে যেতে হবে, তাহলেই তারা সফল হবে। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে অসংখ্য অ্যাথলেট তৈরি করেছি। তারা অনেকেই এখন সেনা,নৌ ও বিমান বাহিনীসহ বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।