শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
বাংলাদেশের সকল সম্প্রদায়ের সাথে আমাদের সংযোগ বাড়াতে চাই-পার্বত্য উপদেষ্টা সকল টেলিভিশন চ্যানেল ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ‘জুলাই অনির্বাণ’-শীর্ষক ভিডিওচিত্র প্রচারের উদ্যোগ আ.লীগ নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে এনেছে : জামায়াত আমির ব্রেক ফেল হয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে ২ কিঃমিঃ দূরে গিয়ে থামলো ট্রেন গণমাধ্যমের অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় সভা আয়োজনসহ কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নিলেন জনাব বাহারুল আলম নতুন সিইসি নাসির উদ্দীনের পরিচয় কালিগঞ্জে আছিয়া লুতফর প্রিপারেটরি স্কুলে মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত সলেমান মামুন ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে ডিএমপির ৩৮তম পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন শেখ মোঃ সাজ্জাত আলী

হ্যালো একটু দৃষ্টি দেবেন কি? জি স্যার, মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসার কথা বলছি

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০২০, ১০.৫৬ পিএম
  • ৩৪৯ বার পঠিত

ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন কিংবা জীবনঘাতী অন্য মাদক থেকে শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠী মাদকের ভয়াল থাবায় পুড়ছে। দেশে বেশিরভাগ অপরাধের ‘আঁতুড়ঘর’ এই মাদকের ব্যাপকতা বেড়েই চলেছে। সেই তুলনায় মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা খুবই নগন্য।

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ মিলে মোট মাদক নির্ভরশীলদের এক শতাংশেরও কম ব্যক্তিকে আনা সম্ভব হয়েছে চিকিৎসার আওতায়। কম সংখ্যক চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, সাধারণ হাসপাতালে মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকা, অভিজ্ঞ ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীর অভাব এবং চিকিৎসা সম্পর্কে সঠিক ধারনার অভাবে সমাজের মাদক নির্ভরশীলরা থেকে যায় চিকিৎসার বাইরে। এখনো পর্যন্ত দেশের অনেক জেলায় কোনো মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নেই। আর বর্তমান বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ কারনে অবহেলিত এই সেবা খাতটি নাজুক অবস্থায় পড়েছে।

গত ৮ই মার্চ ২০২০ বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম সংক্রমণ সনাক্ত করার মাত্র অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি বেশ দ্রুত বদলে যেতে শুরু করেছে। সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষনার পরে পুরো দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল সংক্রমণ ঠেকানো। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ‘লকডাউন’ কিছুটা হলেও কাজে লেগেছে। লকডাউন পদ্ধতি ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অর্থনীতির চেয়ে মানুষের জীবন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে পৃথিবীর বহু দেশ এখন পর্যন্ত জনস্বাস্থ্যকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। অর্থনীতির বিবেচনায় যায় হোক, এ মুহূর্তে স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে অগ্রাহ্য করা যাবে না। তবে সবকিছুর পরেও আমাদের অর্থনীতির ভাবনা হালকা ভাবে দেখার সুযোগ নেই। লকডাউনে এসে তো মুখ থুবড়ে পড়েছে অর্থনীতি। সকল শ্রেনীর মানুষ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। দেওয়ালে পিঠ ঠেকছে দৈনিক খেটে খাওয়া মানুষের। কবে ‘লকডাউন’ উঠবে কবে ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি, তার কোনও দিশা দেখতে পাচ্ছে না মানুষ।

‘লকডাউন’ এর মত পরিস্থিতিতে মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র গুলোর কথাও ভাবতে হবে। দেশ থেকে মাদক নির্মূলে সরকারের সাথ সাথে বেসরকারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র গুলো মাদকের ভয়াল থাবা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষায় ও মাদকাসক্তদের পুনরায় কর্মক্ষম করতে নিরলস ভাবে কাজ করছে। মাদকের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্র সমূহকে অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন।

এবিষয়ে “পীসফুল লাইফ” নামে একটি মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিক মনির হোসেন বলেন, ‘‘আমরা মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করি। ঢাকা শহরে গত সাতবছর আমি প্রতিষ্ঠান চালাই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী আসে। এখন রোগী না-আসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মত অবস্থা হয়েছে। লকডাউনের সময় আমার সেন্টারে অনেক রোগী বাড়ি ফিরে গিয়েছেন।
ভেবেছিলাম দ্রুত লকডাউন উঠে গেলে প্রতিষ্ঠানে কাজ আবার শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু লকডাউনের মেয়াদ বাড়ল। কিন্তু এভাবে আমাদের কত দিন চলবে? প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সংসার চালাতে সমস্যায় পড়বে। সরকারের এদিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার ও কিছু আর্থিক সাহায্য করা প্রয়োজন’’
একই খেদ মনজুর হোসেন পিন্টু ‘‘অঙ্কুর” মাদক নির্ভরশীলদের নিরাময় কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠানের মালিকের গলায়।

তিনি বলেন, ‘‘আমি চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা থেকে রোগী এনে চিকিৎসা সেবা প্রদান করি। রিকভারী, চিকিৎসক ও কাউন্সেলরসহ ২২ জন স্টাফ আছেন। এই অবস্থা চললে এরা সবাই বেকার হয়ে পড়বে। এদের এখনো বেতন ভাতা দিতে পারছি, কিন্তু এটা কতদিন সম্ভব।’’

এই প্রতিষ্ঠান গুলো দেশের মাদক চিকিৎসায় বড় ভূমিকা পালন করে। রোগী ভর্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে দেশের লাইসেন্স প্রাপ্ত তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান চিকিৎসার পাশাপাশি এদের ভূমিকা আছে দেশের অর্থনীতিও। দুশ্চিন্তার মেঘ প্রতিষ্ঠানে কাজকরা সবার মনেও। দেশে ‘‘লকডাউন উঠে গেলেও প্রতিষ্ঠানগুলো তার পুরাতন ছন্দে ফিরতে পারবে কী? এমন প্রশ্ন এবং সবাই অপেক্ষায় আছে, কবে ফের প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু হবে?

লকডাউনে প্রবল সঙ্কটের মুখে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশে দাঁড়ানো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উচিত, সম্প্রতি সংযোগ (মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নেটওয়ার্ক)-এর অনলাইন সভায় বিভিন্ন দাবী-দাওয়ার কথা উঠে এসেছে। তারা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কাছে দাবী করেন- মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসায় কর্মরতদের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) প্রদান, লাইসেন্স ফি মওকুফ করা, সহজ শর্তে ও সুদমুক্ত ঋণী প্রদান, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় রোগী প্রতি খরচ বা বরাদ্দ প্রদান, বিভিন্ন স্থান থেকে রোগী আনা-নেয়ার সুবিধা প্রদান, বিশেষ অনুদান প্রদান বা ইতোমধ্যে যারা অনুদান পেয়েছেন তাঁদের অর্থ অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠানোর দাবি তুলেছে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে বাংলাদেশের মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র সাথে কর্মরত সকল পেশাজীবীদের কর্মসংস্থান রক্ষা করা আবশ্যক কারণ এই পেশাজীবীরা নিজেদের জীবনের ঝুকি নিয়ে মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে কাজ করেন। এদের জন্য কোন আর্থিক প্রণোদনা নেই।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণে পাঁচটি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ঘোষণা করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই মহামারী পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সরকারের উচিত এই অর্থনৈতিক মন্দায় ক্ষতিগ্রস্থ মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রর পেশাজীবীদের পাশে দাড়ানো এবং সহযোগিতার হাত বাড়ানো।

বিভিন্ন সময় আলোচনায় আসলেও মাদক নির্ভরশীলদের সংখ্যা নিয়মিত বাড়ায় চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে উঠেনি। যেসব মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে সেখানেও আছে পর্যাপ্ত দক্ষ কর্মীর অভাব। সেসব বিষয়গুলো সমাধানের জন্য অনেক বার সভা ও বিভিন্ন স্তরে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিবেন ও তথ্যে দেখাযায় কারাগারে কারাবন্দিদের মধ্যে ত্রিশ ভাগ বন্দী মাদকাসক্ত রোগী, এর ফলে সরকারের সম্পাদের অপচয় হচ্ছে। তাই সরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা কেন্দ্রের অবকাঠামো তৈরি করে পরিচালনার জন্য যদি বেসরকারি পর্যায়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তহলে এক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তরা এগিয়ে আসতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশের নব্বই শতাংশ কেন্দ্র রিকভারীদের দ্বারা পরিচালিত, যা তারা সেবা মূলক কাজ হিসেবে পরিচালনা করে। এতে রিকভারীরা নিজেদের সুস্থ্যতা বজায় রাখতে পারে অন্যদিকে মাদক নির্ভরশীলদের পুনর্বাসন করে দেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য খাতে ভূমিকা রাখছে। এখনো পযন্ত বড় কোন প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তা এই খাতে বিনিয়োগ করেনি বা সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রণোদনা না থাকায় কেউ পুঁজি বিনিয়োগের ঝুঁকি গ্রহণ করেনা। বেসরকারি পর্যায়ে মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্প্রসারিত করতে বেসরকারি মাদকাসক্ত পরামর্শ কেন্দ্র, নিরাময় কেন্দ্র ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী।

পাশাপাশি যারা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গুলো পরিচালনা করছে তাদের কথা শুনতে হবে, ভাবতে হবে এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
করোনা ভাইরাস কারনে জনস্বাস্থ্যের জরুরী কার্যক্রম বাস্তবায়নের যে কোন পর্যায়ে সম্পদ ব্যবহার ও বন্টন, মানুষের অধিকার বিষয়টি ভাবতে হবে না হলে সামাজিক অবিচারের বিদ্যমান অবস্থা আরো জটিল করে তুলবে। জীবন-রক্ষাকারী সংস্থাগুলি জন্য সীমিত সম্পদ বিশেষ ওষুধ, কাঠামোগত দিক বা মানব সম্পদ (স্বাস্থ্য কর্মীরা) সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

নীতিনির্ধারকদের বা পরিকল্পনাকারীদের সামগ্রীক বিবেচনায় রাখা উচিত জনস্বাস্থ্য ও সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের কারনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সিমাবদ্ধতা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে। সকল চিকিৎসা সেবায় সামনের সারি থেকে যারা লড়ছেন নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব হলো এই সব মানুষের প্রয়োজনিয়তাকে অগ্রাধীকার ভিক্তিতে বিবেচনায় রাখা।

লেখক- ইকবাল মাসুদ, সভাপতি, সংযোগ মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নেটওয়ার্ক

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
      1
23242526272829
30      
  12345
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
2930     
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com