বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল সময় হল ১৯৭১ সাল। মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন ডিপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল, বেশ কয়েকজন এসপি সহ প্রায় সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্য বাঙ্গালীর মুক্তির সংগ্রামে জীবনদান করেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস হতেই প্রদেশের পুলিশ বাহিনীর উপর কর্তৃত্ব হারিয়েছিল পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার। পুলিশের বীর সদস্যরা প্রকাশ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ তারিখে ঢাকার রাজারবাগের পুলিশ লাইন্সে ২য় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বাতিল ৩০৩ রাইফেল দিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। এই সশস্ত্র প্রতিরোধটিই বাঙ্গালীদের কাছে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরুর বার্তা পৌছে দেয়। পরবর্তীতে পুলিশের এই সদস্যরা ৯ মাস জুড়ে দেশব্যাপী গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং পাকিস্তানী সেনাদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১২৬২ জন শহীদ পুলিশ সদস্যের তালিকা স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্রে উল্লেখ পাওয়া যায়।
মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ পুলিশ নামে সংগঠিত হয়। বাংলাদেশ পুলিশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পুলিশ বাহিনীর মতো আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, জনগনের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে প্রধান ভুমিকা পালন করে থাকে। শুধু আইন পালন আর অপরাধ প্রতিরোধ বা দমনই নয় দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। বিগত কয়েক বছর যাবত জঙ্গীবাদ দমন এবং নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পুলিশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। পুলিশের সদস্যরা তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা আর পেশাদরিত্ব দিয়ে অপরাধ মোকাবিলায় প্রতিনিয়ত সৃজনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন। তারপরেও কিছু কিছু কারণে সাধারণ জনগণের মাঝে পুলিশের প্রতি অসন্তষ জন্ম নেয়। দিনের পর দিন সাধারণ মানুষ পুলিশকে শ্রদ্ধা থেকে ভয় পেতে শুরু করে। কিন্তু আজ যখন করোনা ভাইরাসের কারণে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে, তখন এই পুলিশ সদস্যরা তাদের সেবায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছে। যার ফলে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর শ্রেষ্ঠ সম্মানে ভুষিত হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে অভিযুক্ত এই বাহিনী তার পেশাদরিত্ব আর জনগনের প্রতি দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে জনগনের গর্বের বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, অপরাধীদের গ্রেপ্তার, মামলা গ্রহণ, বিচারে সহায়তা, সড়ক শৃঙ্খলা ও ভিআইপি নিরাপত্তা-প্রটোকলসহ অনেক দায়িত্ব পালন করে৷ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও করতে হয় ৷ এই মহামারী করোনায় ঝুঁকির মাঝেও মনোবল অটুট নিয়েই দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। জনগণের সামাজিক দূরত্ব ও ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে সর্বত্র নিয়মিত টহল দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থাও করছেন তারা। পাশাপাশি করোনা শনাক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া, কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তা, রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটানোসহ করোনা প্রতিরোধে যে মহাযজ্ঞ তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন তারা। এসব কাজ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন জেনেও সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন তারা। মানবতার জননী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করছি পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যদের মাঝে পিপিই হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লোভস, মাস্কসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী দিয়ে দিন। আমি মনে করি বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে দ্বিতীয় গৌরবোজ্জ্বল ২০২০ সাল। পুলিশ এই মহামারীর সময় জনগণের জন্য যে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তা কোনদিন ভুলবার নয়। বর্তমান এই বিপদের সময় পুলিশ একমাত্র জনগণের বন্ধু।
মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ
সম্পাদক,
মানুষের কল্যাণে প্রতিদিন