প্রতিনিয়ত দেশের কোথাও না কোথাও সাংবাদিক আক্রান্ত, রক্তাক্ত, লাঞ্ছিত, হামলা-মামলা শিকার হচ্ছেই। তাইতো বিএমএসএফ প্রতিবাদ জানায়।
প্রতিবাদ মানে কেবল রাষ্ট্রের কাছে নালিশ জানিয়ে রাখা। প্রতিদিন ফেসবুকে দেয়া সাংবাদিক নির্যাতন মামলা-হামলার প্রতিবাদ জানাতে অনেকে হাপিয়ে ধৈর্য্যের সীমা ভেঙ্গে ফেলছেন। কমেন্টসে কেউ কেউ হামলাকারির ওপর পাল্টা হামলার কথাও বলছেন।
আরে ভাই, যেখানে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে খোদ সাংবাদিক মামলা করে কারাগারে পাঠায় সেখানে ঐ বিশ্বাসটা কি আর কখনো থাকে? যখন বাহিরের মানুষের পক্ষ নিয়ে আপনার মসনদ টিকিয়ে রাখতে একদল সাংবাদিকের ওপর অন্যায় ভাবে তাদের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে তার ভিডিওক্লিপ ফেসবুকে প্রচার করে মজা নিচ্ছেন, তখনতো আপনি শুয়োর- শকুনের দলে চলে গেলেন।
জেনে রাখুন, সম্প্রতি কক্সবাজারে সাংবাদিক শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলাকারী তিনিও সাংবাদিক। কক্সবাজার মেয়রের পিআরও হিসেবে তার পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, ঐদিনই আটক, পরদিন থেকে এখনও কারাগার।
গত দুদিন আগে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সম্পাদক ছাহেব সুশান্ত ঘোষ নামে আমার এমপি ডটকম সম্পাদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা করেন। আর সেটিও জানতে পারলাম মামলাকারী ওখানকার প্রেসক্লাব সম্পাদক তিনি। এমপির বিরুদ্ধে ত্রান অনিয়মসহ নানা দূর্ণীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের কারনে সুশান্তের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আর তাই দিনে মামলা, শেষরাতে আটক দুপুরে কারাগার। আরেক প্রেসক্লাব সম্পাদকের খোঁজ মিলেছে তিনি ডজনেরও বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা ও হয়রাণী করে অনেককে সর্বশান্ত করেছেন।
আজকাল চৌকিদাররাও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। ঘটনাস্থল খাগড়াছড়ি।
পুলিশের হামলায় অটোচালকের মৃত্যু সংবাদ দেশের ৯৫ ভাগ মিডিয়ায় প্রকাশ হলো অথচ মাত্র স্থানীয় একটি পত্রিকার তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অনুরুপ মামলা, আটক, এখনও কারাগার, ঘটনাস্থল নরসিংদী।
চলমান করোনাকান্ডে দেশে শতাধিক সাংবাদিক ছাটাই, হামলা, মামলা, লাঞ্ছিত এবঙ অর্ধশতাধিক সাংবাদিক কারাগারে রয়েছেন। বিএমএসএফ’র পক্ষ থেকে ইদের আগে ওই সকল সাংবাদিকের মুক্তির দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু হলোনা!!!
যে মামলাগুলো ২/৩ বছর আগে ৫০০/৫০১ ধারায় সংবাদ প্রকাশে মানহানির কারনে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের হতো। মামলা দায়েরের পর তদন্ত হতো। সত্যতা মিললে আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা দিতো। রাষ্ট্র সাংবাদিকের প্রতি সম্মান দেখিয়ে জামিনযোগ্য ধারা ছিলো এটি। প্রথা ছিলো সাংবাদিকের হাতে হাতকড়া নয়। এখন সামনে পেছনে হ্যান্ডকাফ।
দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে। দূর্ণীতিবাজরা যখন সরকারের সম্পদ পুকুর চুরি ছেড়ে সমুদ্র ডাকাতিতে নেমেছে তখনই কেবল পথের কাটা সাংবাদিক! সাংবাদিক দমনের হাতিয়ার হিসেবে কোথাও ৫৭, ৩২ আবার কোথাও তথ্য প্রযুক্তি আইন, কোথাও ডিজিটাল নিরাপত্তা, কোথাও সাইবার আইনের অগনিত ধারা। যেমন মাছ ধরতে বিন্দি জাল পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। তেমনি সাংবাদিক দমনেও যা যা দরকার তা সরকারে থাকা সরকার বিরোধী ডাকাতেরা সম্পন্ন করে রেখেছেন। তাইতো দিনে সংবাদ, দুপুরে মামলা, রাতে গ্রেফতার, বিকেলে কারাগার।
এগিয়ে যাচ্ছে দেশ; অধ:পতন হচ্ছে গণমাধ্যমের। অনৈক্য বাড়ছে, বাড়ছে হানাহানি ও মনোমালিন্য। নেতৃত্বহীনতাই মূল কারন।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিকের ফোরামের মতে, ডাক্তারের পেশা ডাক্তারী করা। ডাক্তারের হাতে অপারেশনে রোগির মৃত্যু হতেই পারে। তাই বলে কি ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা হয়? যদি নাইবা হয় তবে সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করেছে তার পেশাগত দায়িত্বের জায়গায় থেকে ব্যক্তিগত আক্রোশে নয়। সাংবাদিকেরা যদি রাষ্ট্রের হয়ে কাজ করেন তবে কেনো তাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মামলা হবে? প্রশ্নটির জবাব জাতির কাছে রেখে গেলাম।
আহমেদ আবু জাফর, প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, ০১৭১২৩০৬৫০১, মে ২৩, ২০২০ খ্রি: