যৌতুকের টাকা না পেয়ে হত্যা করা হয় এক দরিদ্র পিতার অসহায় কণ্যাকে”, পিতার এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আদিতমারী থানা পুলিশ আসামীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। জেলার মানবিক পুলিশ সুপার জনাব, আবিদা সুলতানা,বিপিএম,পিপিএম মহোদয় আসেন হত্যা মামলাটি সরেজমিনে তদন্ত তদারকী করতে। ধৈর্য ধরে দীর্ঘ সময় কথা শোনেন মৃতার আত্মীয়-স্বজন এবং স্থানীয় জনসাধারণের (অবশ্য এটি তাঁর স্বাভাবিক কাজের নিয়মিত অংশ) ।
আসামিরা তখনও পলাতক রয়েছে । তিনি মন্তব্য করলেন, এমন জঘন্য অপরাধ করে পালিয়ে থাকার সুযোগ নেই।
আসামীরা যেখানে আছে, খুঁজে বের করে গ্রেফতার করতে হবে। গতি পেল ডিজিটাল এবং ম্যান্যুয়াল ইনভেস্টিগেশনের।
আসামীদের একাধিক অবস্থানের তথ্য আসতে লাগলো থানা পুলিশের কাছে। সকল তথ্য যাচাই-বাছাই করে নির্ভরযোগ্য তথ্যকে কাজে লাগিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেল, আসামীরা গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকায় অবস্থান করছেন।
জানানো হলো এসপি স্যারকে, তিনি তাৎক্ষণিক আদেশ দিলেন, এডভান্স টিম পাঠিয়ে আসামীদের অবস্থান সনাক্ত করে যদি তথ্য সঠিক হয়, কাশিমপুর থানা পুলিশের সহায়তা তাদের গ্রেফতার করার জন্য।
আদিতমারী থানা পুলিশের চৌকস পুলিশ টিম গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকায় দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টা টানা অনুসন্ধান শেষে আসামীদের অবস্থান সনাক্ত করেন।
এবং কাশিমপুর থানা পুলিশের আন্তরিক সহযোগিতায় গভীর রাতে এজাহার নামীয় তিনজন আসামীকে গ্রেফতার করেন। হত্যাকান্ডে স্বীকার মৃতার’ স্বামী, শাশুড়ী এবং শশুর( ছবির বামদিকে শাশুড়ী, মাঝে শশুর এবং ডানে স্বামী)। এসপি স্যার সংবাদটি জানার পর তিনি তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশের একটি টিম দ্রুত কাশিমপুর গাজীপুর যাওয়া এবং আসামীদের নিয়ে আসার জন্য যানবাহন, জ্বালানিসহ সকল প্রকার লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে স্কট করে নিয়ে আসার আদেশ দিলেন। ১২/০৯/২০২০ খ্রি, তারিখ আসামীদের গাজীপুর কাশিমপুর থেকে স্কট করে নিয়ে এসে আদালতে এ সোপর্দ করা হলো।
এত লম্বা ইতিহাস লিখার কারণ হল, একজন দরিদ্র অসহায় পিতা, তাঁর মেয়ে হত্যার বিচার ভবিষ্যতে কি হবে, সেটা ভবিষ্যত বলে দিবে।
কিন্তু পুলিশের এমন আন্তরিক প্রচেষ্টায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা আসামীদের, তাঁর (বাদীর) নিজের বিন্দু মাত্র চেষ্টা তদবির ছাড়াই পুলিশ নিজ উদ্যোগে আসামীদের গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করে লালমনিরহাট কোর্টে সোপর্দ করবে, এই ভাবনায় তাঁর(বাদীর)আনন্দঅশ্রু গড়িয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশ, জনতার পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশ, মানবতার পুলিশ। দিন বদলের সাথে সাথে জনতার পুলিশ হওয়ার প্রতিযোগীতায় নিজেকে উজাড় করে মেলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
শুধু প্রয়োজন, সমাজের ভালো মানুষ গুলো পুলিশের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। ব্যতিক্রম থাকবেই, ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হতে পারে না। তবে এটাও সত্য যে, পুলিশ জনতার হলে, দুষ্ট লোকদের দুষ্টুমির দিন শেষ হয়ে যাবে।
সেই ভয়ে, দুষ্টু লোক গুলো সকলে এক হয়ে সবসময় পুলিশের বিচ্ছিন্ন খারাপ কাজ (যা কখনও সত্য, কখনও মিথ্যা) ফলাও করে সকল মানুষের নজরে আনার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। কারণ পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দিয়ে তাদেরকে ব্রিটিশ পুলিশ বানিয়ে রাখতে পারলে, সমাজে তাদের শাসন, শোষণ নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে পারবে।
বিশ্বাস থেকে বলছি, বাংলাদেশের মানুষ একদিন তাঁদের নিজেদের এবং পরবর্তী প্রজন্মের স্বার্থে, বাংলাদেশ পুলিশ কে জনবান্ধন এবং রাষ্ট্রের শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে অকুণ্ঠ সমর্থন করবেন, ইনশাআল্লাহ্। তখন দুষ্টুরা নিপাত যাবে, মানবতার জয় হবে, ধন্যবাদ সবাইকে।