গ্রাম বলতে একসময় আমরা বুঝতাম মাটির কাঁচা রাস্তা , বর্ষাকালে কাদামাটিতে একাকার রাস্তা ঘাট , স্কুল , বাজার ঘাট , মাঠে যাওয়া সবই চলত পায়ে হেটে , মাথায় টোপর পরে লাঙল জোয়াল কাঁধে ফেলেকৃষকের মাঠে যাওয়া, গরুর গাড়ির ক্যাচর ক্যাচর শব্দ বলে দিতো ফসল আনতে মাঠে যাচ্ছে কৃষক, গাড়ী ভরে সোনালি ধান ফসল নিয়ে বাড়ি ফেরা , কৃষানী বধুর মুখের হাসি , আবাল বৃদ্ধ বনিতা মিলে সেই ধান গরু দিয়ে মাড়াই করার চিত্তাকর্ষক দৃশ্য ছিল কৃষকের ঘরে ঘরে , দলবেঁধে গৃহবধুদের জল আনতে যাওয়া , বিকেল বেলায় বাড়ির পাশের মাঠে দাড়িয়াবাধা , গোল্লাছুট , হাডুডু খেলা ছিল গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় খেলা ,সন্ধ্যায় ঝিঝি পোকার ডাক, বাড়ির পাশে জঙ্গলে শিয়ালের ডাক, ঘরে ঘরে হেরিকেন, কুপি বাতির আলোয় ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা , বাড়ির লোকের খাওয়া দাওয়া , বাড়ির সামনে দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তায় সঙ্গীত প্রিয় পথিকের গলা ছেড়ে উদাত্ত কন্ঠে গান , সন্ধ্যা পার হলেই মনে হতো গভীর রাত , সন্ধ্যার পরপরই হেরিকেন কুপির আলোয় মাদুর বিছিয়ে চলত রাতের খাবার, পড়তে বসার কিছুক্ষন পরই পড়ুয়াদের চোখ ঘুমে ঢুলু ঢুলু , শুতে যেয়ে দাদী নানি ফুপুর কাঁছে রুপকথার গল্প শুনতে শুনতে ভয়ে তাদের জড়িয়ে ধরে একসময় ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যেতো শিশু , কিশোর কিশোরীরা, ফজরের নামাজের আজানের আগেই কাকডাকা ভোরে ঘুম ভাঙতো শিশুদের । ভোরের আলো ফোটার আগেই ব্যস্ততা বেড়ে যেত কৃষক বধুর কারন সাত সকালেই কৃষকেরা মাঠে চলে যেতো । এভাবেই শুরু হতো দিনের । এমনই এক গ্রামে কেটেছে আমার শৈশব, কৈশোর, তারুন্য যৌবনের প্রথম দিনগুলো । চলবে ।
লেখকঃ এসএম মোস্তফা কামাল
উপসচিব, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।