রাজধানীসহ সারাদেশে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে রাজধানীতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃষ্টি যে হবে তার আলামত দেখা দিয়েছিল রোববার সকালের দিকেই। দিনের শুরুতে আকাশ ছিল মেঘলা মেঘলা। তারপর সূর্য তার নিয়মমাফিক তাপ ছড়িয়েছে। দুপুরে ছিল ভ্যাপসা গরম।অবশেষে সন্ধ্যায় শুরু হয় দমকা হাওয়ার সঙ্গে ধূলিঝড়। পরে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি। মূহূর্তের মধ্যেই শুরু হয় কালবৈশাখী। সঙ্গে ছিল শিলাবৃষ্টি।
সংসদ ভবন এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ে মিলি ডি কস্তা (৬০) নামে এক নারী মারা গেছেন। শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক জানান, ঝড়ের সময় পুরানা পল্টন মোড়ে চায়ের গলিতে উঁচু ভবন থেকে ইট পড়ে নিহত হন মো. হানিফ (৪৫) নামে এক চা বিক্রেতা।
মিরপুর থানার ওসি দাদন ফকির জানান, নির্মাণাধীন ভবনের ইট পড়ে পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় মো. দুলাল মিয়া (৪০) নামে একজন গাড়িচালকের মৃত্যু হয়েছে।
কাকরাইল এলাকায় একটি গাছের ডাল ভেঙে অটোরিকশা ও প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে, এতে অটোরিকশাচালক আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ঝড়ে অন্তত ২৫ স্থানে গাছ উপড়ে বা ভেঙে পড়েছে। শাহবাগ থানার সাইনবোর্ড উড়ে গেছে। মিন্টো রোডে পুলিশ ভবনের সামনে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে। এখানে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে প্রাইভেটকারের ওপর। প্রাইভেটকারে থাকা একজন সরকারি কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। ধানমণ্ডি তিন নম্বর সড়কেও গাছের ডাল ভেঙে সড়কে পড়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার আতাউর রহমান জানান, ঢাকার মগবাজারের একটি হাসপাতালের দেয়াল ধসের খবর পেয়ে সেখানে একটি ইউনিট পাঠানো হয়। এদিকে কালবৈশাখীর কারণে শাহজালালে উড়োজাহাজ অবতরণ ও উড্ডয়নে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়া ঝড়ের স্থায়িত্ব ছিল প্রায় আধা ঘণ্টা। এরপর মাঝারি থেকে হালকা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। আকাশে ছিল বিজলির চমকানি আর গুড়গুড় শব্দ। হঠাৎ বৃষ্টি নগরের অনেককে ভিজিয়েছে। দুর্ভোগেও পড়েছেন অনেকে। সামান্য সময়ের বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুপানি জমে। ফলে পথচারীদের পড়তে হয় দুর্ভোগে। অনেক রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ে রাস্তায়।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সন্ধ্যায় রাজধানীতে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মাঠের বোরো ধান, গম, আম ও কাঁঠালের জন্য এ সময়ের বৃষ্টি আশীর্বাদ বলে জানিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে মৌসুমি লঘুচাপের প্রভাবে এই কালবৈশাখী হয়েছে। এ মৌসুমে ঝড়-বৃষ্টি স্বাভাবিক। পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর আশপাশের এলাকায় বাংলাদেশের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ঝড়টি ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি কক্সবাজার পর্যন্ত যাবে। ঝড়টি দক্ষিণ দিকে যত অগ্রসর হবে, ততই শক্তি অর্জন করবে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে নদীবন্দরে দুই নম্বর সংকেত দেখানো হয়েছে।