মারুফ সরকার, স্টাফ রির্পোটার : ফাল্গুনের শান্ত দুপুরে ১৪৪ ধারা ভেঙে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যে মিছিল বেরিয়ে এসেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, তা আমাদের ইতিহাসের পাতায় গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউররা। তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে স্বীকৃতি পেয়েছে আমাদের মাতৃভাষা।
মাতৃভাষা দিবসে সকল শ্রেণির মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন ভাষা শহিদদের। পিছিয়ে নেই শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও। তারা অনেকেই মনে করেন ৫২-র ভাষা আন্দোলনই আমাদের ’৭১-এর বীজ। সেই বীজের বৃক্ষ স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছে আমাদের। তারকাদের অনেকেই মাতৃভাষা দিবসের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারকারা। চলুন জেনে নিই তাদের প্রতিক্রিয়া-
চিত্রনায়িকা শাহনূর
রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর, জব্বাররা। তাদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা, মায়ের ভাষা। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা সেদিন ঘটেছিল, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
নিরব হোসেন
ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা নিরব হোসেন বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন আমাদের একটি বিশাল অর্জন। পৃথিবীর একমাত্র ভাষা, যার জন্য রাজপথে প্রাণ দিতে হয়েছে এবং একই সঙ্গে গর্বেরও। আমি গর্ব করে বলতে পারি বাংলা ভাষায় কথা বলি। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি শুনলে এখনো ইমোশনাল হয়ে যাই। আমি ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
সাবরিনা পড়শী
শিল্পী ও অভিনেত্রী সাবরিনা পড়শী বলেন, সত্যি কথা বলতে কী আমার কাছে প্রতিদিনই শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আজ দিবস বলে ভাষা শহিদের স্মরণ করবো আর বাকি দিন করবো না, তা তো হয় না। আমার কাছে ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ভালোবাসা দিবসের ব্যাপারটা প্রতিদিন থাকুক। পালন করতে হবে না, মাথায় থাকলে হবে। আজ আপনি ফুল দিয়ে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাবেন, পরশু জানাতে দোষের কি! আমি মনে করি দোষের কিছু নেই। তবে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের যা দিয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তাদের জন্য আজ আমরা মন খুলে কথা বলতে পারছি, লিখতে পারছি। অন্যদিকে আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালান করবে। যার সূত্রপাত আমরা। এইটা আমাদের গর্বের বিষয়।
আরশ খান
ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা আরশ খান বলেন, আমি যে ভাষায় এখন তৃপ্তি করে কথা বলছি, তা ভাষা শহিদদের অবদানের জন্য। যে কোনো কিছুর জন্য রেভুল্যুশন হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির রেভুল্যুশনে ছাত্র সমাজ শুধু ভাষাকে রক্ষা করেনি একটি বীজও বপন করেছে। স্বাধীনতার বীজ। যে বীজ থেকে একটা সময় আন্দোলনের বড় বৃক্ষে পরিণত হয় এবং আমরা স্বাধীনতা লাভ করি।
আমি দেশের বাইরে খুব একটা যেতে চাই না, কারণ আমার বাংলায় কথা বলতে ভালো লাগে এবং সহজে আমার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি। যা অন্য ভাষায় আমার জন্য অতৃপ্তিদায়ক।
সামিনা বাসার
এ প্রজন্মের এই অভিনেত্রী বলেন, আমি অনেকদিন দেশের বাইরে ছিলাম। নিজের ভাষায় কথা বলতে যে তৃপ্তি আছে তা অন্য কোথাও পাইনি। আমি প্রায় চারটি ভাষা জানি কিন্তু অন্য ভাষায় কথা বলে বা মনের ভাব প্রকাশ করে কখনো আনন্দ পাইনি। যতটা বাংলা ভাষায় কথা বলে পাই। এইটা আমাদের গর্ব এবং অহংকারের। শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমারা মাতৃভাষা পেয়েছি। যার মর্যাদা আমাদেরকেই দিতে হবে।
অভিনেত্রী তানিন সুবহা
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি শুনলে এখনো ইমোশনাল হয়ে যাই। আমি ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।এইটা আমাদের গর্ব এবং অহংকারের। শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমারা মাতৃভাষা পেয়েছি। যার মর্যাদা আমাদেরকেই দিতে হবে।
অভিনেত্রী আনিকা তাবাস্সুম
একুশের চেতনা আমাদের আত্মমর্যাদাশীল করেছে। দুর্জয় সাহস জুগিয়েছে। ‘একুশ মানে মাথা নত না করা’- চিরকালের এ স্লোগান আজও সমহিমায় ভাস্বর। একুশ মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ, যাবতীয় গোঁড়ামি আর সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে শুভবোধের অঙ্গীকার। ৫২-র ভাষা আন্দোলনেও এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছিল যেসব ভাষা শহীদ, তাদের ত্যাগই আমাদের এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা।