বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম:
শেরপুরে ইউনিয়ন আ.লীগ থেকে ২০ নেতার পদত্যাগ কালিগঞ্জে র‌্যালী ও আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস পালিত হয়েছে ৪৬ বছরেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি,,,,,,,,, কালিগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা মাহমুদীয়া দাখিল মাদ্রাসাঃ ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান রাজারহাটে তিস্তায় ভাঙ্গন কবলিত ১২০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ঝিনাইগাতীতে নিখোঁজ অটো চালক রজব আলীর মরদেহ উদ্ধার মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকী : বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ তথ্যমন্ত্রীর সাথে জাপানের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত মুঘল কাবাব হাউজকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে  নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষ কালিগঞ্জের নলতা ইউপি চেয়ারম্যান স্বপদে বহালঃ ইউনিয়নবাসীর মাঝে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে বাংলাদেশ এখন তলাবিহীন রাষ্ট্র নয় উন্নত রাষ্ট্র – এড,আব্দুল মতিন
বাঘ বিধবা…

বাঘ বিধবা…

 

পেশাগত কারনে সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন থানায় চাকুরী করার সৌভাগ্য হয়েছিল। সৃন্দরবনের ধারে থাকার কারনে বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন কেউ বেড়াতে গেলেই তাদের বন দেখাতে নিয়ে যাওয়া অনেকটা রুটিনে পরিণত হয়েছিল। বনে যাওয়া কিংবা ফিরতি পথে নজর কাড়তো মানুষের সংগ্রামী জীবন। জোয়ার ভাটার ঢেউয়ের দুলুনি সামনে একা একজন মহিলাই জাল পেতে মাছ অথবা কাঁকড়া ধরছে। দুমুটো ভাতের সংস্থান করতে এসব নারীকে শুধু সংসারের হালই নয় ধরতে হয়েছে ডিঙ্গি নৌকারও হাল। এদের অনেকেরই স্বামী সন্তান অথবা ভাইকে বনের কাঠ মধু সংগ্রহে গিয়ে হতে হয়েছে বাঘের খোরাক। নিঃশব্দে পিছু নেয় নরখাদক, ঘাড়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মটকে দেয় ঘাড় তার পর শিকার কামড়ে ধরে হারিয়ে যায় জঙ্গলে। খোঁজে বের হলে কদাচিৎ পাওয়া যেত বাঘে খাওয়া মানুষের দেহাবশেষ। সেসব দেহের আইনগত কার্য্যক্রমের জন্য বনবিভাগের লোকজনের সাথে যেতে হতো পুলিশ সদস্যদের চোখের সামনে পাশবিকতার চিহ্ন সবার বুকেই কাঁপন ধরায়।

এরকমই অনেক ঘটনার মধ্য একটি ঘটনা লিখেছেন শ্রদ্ধেয় কল্যান ব্যানার্জি, তাঁর লেখা থেকে তথ্য নিয়েছি। তবে এ ঘটনাটি লড়াই করে জীবিত ফিরে আসার….

গত ২৪ মার্চ ভোরে শ্যামনগরের ভেটখালী গ্রামের ওয়াজেদ ছোটভাই লিয়াকতকে সাথে নিয়ে কাঁকড়া ধরতে চুনকুড়ি নদ দিয়ে বনে ঢোকেন। বনযাত্রায় বেশ অভিজ্ঞ ওয়াজেদ, সেই ১০/১২ বয়সে টিকে থাকার দীক্ষা পেয়েছে দাদা ফজর আলী আর বাবা আব্দুল জব্বারের কাছে। তাঁরা শিখিয়েছেন কীভাবে বনে সুরক্ষিত থাকা যায়, হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে নিজকে রক্ষা করা যায়। বাপদাদার সেই দীক্ষাতেই আজও আস্থা।

নৌকা বেয়ে পৌছে যান ভারত সীমান্তের পার্শবর্তী কাছিকাটা দাড়গাং গহীনে, নৌকার দুই পাশে দুই ভাই বসে পেতে রাখা দোন (কাঁকড়া শিকারের বড়শি) তুলছেন। অনেক কাঁকড়া ধরা পড়েছে, দুভাই তা তুলছে আর বাক্সে রাখছে, এ ভাবেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে।

পাশেই হেঁতালবন, তারপর ঘন বন।হেঁতালবনে বাঘ লুকিয়ে থাকে। তবে বাঘ থাকলে বা হঠাৎ চলে এলে চারপাশের পরিস্থিতি দেখে বোঝা যায়। হরিণ ছোটাছুটি শুরু করে, বানর তিড়িং বিড়িং করে, এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফালাফি আর আওয়াজ করতে থাকে, অন্য পাখি ও প্রাণীদের মধ্যেও চঞ্চলতা দেখা যায়। এসব দেখেই ওরা সতর্ক হয়।

সেদিন সন্ধ্যায় সবকিছুই ছিল সুনসান,চারপাশে শুধু প্রকৃতির নিজস্ব আওয়াজ। আর তারাও ডাঙা থেকেও প্রায় ১৪-১৫ হাত দূরে, খালের মধ্য নৌকায়, ফলে নিশ্চিন্ত মনেই দোন তোলা চলছিল। হঠাৎ আচমকা শব্দ, কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝড়ের বেগে একটা বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে ওয়াজেদের ঘাড়ে। ঘাড় ও মাথা বরাবার কামড় বসালো। মোটা একটা গামছা ছিল ঘাড়ে, তাই ভালোমতো দাঁত বসাতে পারল না। তখন সামনের দুই পা চেপে বশে নেওয়ার চেষ্টা করল। বাঘের ধাক্কা সামলাতে না পেরে দুজনই হুড়মুড় করে নৌকা থেকে পানিতে পড়ে যায়। গলা পানিতে খালি হাতে শুরু হয় বাঁচার লড়াই। ক্রমাগত বাঘের চোখে আঘাত করতে থাকে ওয়াজেদ।
শুরুতে থতমত খেয়ে গিয়েছিল লিয়াকত, চোখের সামনে ভাইয়ের লড়াই দেখে সেও বৈঠা দিয়ে পেটাতে থাকে বাঘটাকে, ওর চোখে-মুখে আঘাত করতে থাকে। দুই ভাইয়ের তিন-চার মিনিট পানিপথের লড়াইয়ে হার মানে বাঘটি, ওদের ছেড়ে ডাঙায় উঠে সোজা বনে পালায়।

আহত ভাইকে পানি থেকে টেনে নৌকায় তোলে লিয়াকত। ওর ঘাড়সহ শরীরে বিভিন্ন অংশ দড় দড় করে রক্ত ঝরছিল। গা থেকে গেঞ্জি খুলে ক্ষত বেঁধে দেয় লিয়াকত, কিন্তু তারপরও রক্ত পড়া কমছিল না। বন্য লতাপাতা দিয়ে রক্ত ক্ষরণ বন্ধ করার চেষ্টাও করে। তীব্র ব্যথা যন্ত্রণায় জ্ঞাণ হারায় ওয়াজেদ…

ভয় আর অাতংকের মাঝেও সর্বশক্তি দিয়ে সারারাত বৈঠা বেয়ে গ্রামে ফেরে ওরা। চেয়ারম্যানকে জানিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওয়াজেদকে। ইতিমধ্যেই দুমাস পর হয়েছে, ক্ষত আজও শুকায়নি। ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছে ওরা, নয়তো প্রায় তিন হাজার বাঘ বিধবার তালিকায় যুক্ত হতো আরও একটি নাম।
** হরিণ মেরে, যারা বাঘদের বেঁচে থাকার জন্য মানুষ খেতে বাধ্য করছেন, তারা কি হরিণের মাংস খাচ্ছেন নাকি এসব বনজীবি মানুষের মাংস খাচ্ছেন একটু ভেবে দেখবেন কি?

তথ্যঋণ: কল্যান ব্যানার্জি

লেখকঃ  বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির আইন প্রশিক্ষক হাসান হাফিজুর রহমান

Print Friendly, PDF & Email

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

Comments are closed.




© All rights reserved © MKProtidin.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com