সাতক্ষীরাঃ পত্রদূত ও দৃষ্টিপাত সম্পাদকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাতক্ষীরা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র আয়োজনে বৃহস্পতিবার (০৪.০৭.১৯) সকাল ১১ টায় নিউ মার্কেটস্থ শহীদ স,ম আলাউদ্দিন চত্ত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ রিজাউল ইসলামের উপস্থাপনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সভাপতি মোঃ মুনসুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ আশিক সরদার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো: মিজানুর রহমান প্রমূখ। এ সময় উদীচী শিল্পগোষ্ঠী সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান, মানবাধিকার (আসক) জোনাল কমিটি সাতক্ষীরার সাংগঠনিক সম্পাদক মো: সোহারাফ হোসেন (সৌরভ), সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক শাহরিয়া রহমান, সদস্য ফরিদ হোসেন, আমিনুর রহমান, আহাজউদ্দীন সুমন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তারা বলেন, সারা দেশে যখন একের পর এক মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা, হামলা এবং হত্যার ঘটনা ঘটছে তখন সাতক্ষীরার সাংবাদিকরাও বাদ যাচ্ছেন না। স্বাধীন মত প্রকাশ করতে গিয়ে যদি একের পর এক সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটে কিংবা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা-হামলার শিকার হন তাহলে এর চেয়ে হতাশাজনক ঘটনা আর কী হতে পারে? সাম্প্রতি সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সাতক্ষীরা পৌরসভার পক্ষে প্যানেল মেয়র-০৩ ফারহা দিবা খান সাথী বাদী হয়ে পেনাল কোডের ৫০০/৫০১/৫০২/৫০৫অ/১০৯ ধারা মোতাবেক দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক ও প্রকাশক লুৎফুন্নেছা বেগম, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি’র নামে একটি মামলা করেছেন। সোমবার (০১.০৭.১৯) দুপুরে সাতক্ষীরার বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-১ এ হাজির হয়ে মামলাটি করেন তিনি। এর আগে গত ১৬ জুন ১৯ রবিবার দৃষ্টিপাত পত্রিকায় “মেসার্স তদবীর মার্কেট, কালিগঞ্জ” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে গত ১৮ জুন মঙ্গলবার কালিগঞ্জ উপজেলার বাজার গ্রাম রহিমপুর গ্রামের মৃত শেখ আব্দুল লতিফের ছেলে শেখ অজিয়ার রহমান হাজির বাদি হয়ে দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নূর ইসলাম ও কালিগঞ্জ ব্যুরো প্রধান আশেক মেহেদীর বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা-২ নম্বর বিজ্ঞ আমলী আদালতে মানহানির মামলা করেন। সাংবাদিকদের সত্য প্রকাশে বাঁধাগ্রস্ত করতে কতিপয় অসাধুব্যক্তিদের সম্মতিক্রমে এ ধরণের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা-হামলার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। বিষয়টি উদ্বেগজনকও। এমন ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ শঙ্কিত না হয়ে পারে না। তাই, পত্রদূত ও দৃষ্টিপাত সম্পাদকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করায় আমরা সাতক্ষীরা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। এবং এ ঘটনার সাথে জড়িতরা যারই পৃষ্টপোষকতা পাক না কেন তাদের কোন ছাড় দেয়া সরকারের সমচিন হবে না।
তারা আরও বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত প্রায় ৫২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এবং বর্তমান মহাজোট সরকারের সময়ে মোট ৩৩ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। এর মধ্যে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকা- সহ অন্তত ২০ টি হত্যাকা-ের বিচার ঝুলে রয়েছে।
সাগর-রুনি ছাড়াও এ তালিকায় যারা রয়েছেন তারা হলেন; মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, সাইফুল আলম মুকুল, মির ইলিয়াস হোসাইন, শামসুর রহমান, নহর আলি, হারুনুর রশিদ, শুকুর হোসাইন, সৈয়দ ফারুক আহমেদ, মানিক সাহা, হুমায়ুন কবির, কামাল হোসেন, দীপঙ্কর চক্রবর্তী, শহীদ আনোয়ার, শেখ বেলালউদ্দিন আহমেদ, গোলাম মাহফুজ, গৌতম দাস, বেলাল হোসেন দফাদার, জামাল উদ্দিন, তালহাদ আহমেদ কবিদ, সদরুল আলম ও স. ম আলাউদ্দিন।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি-টু-প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) প্রকাশিত সূচকে উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্বের যে কটি দেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিক থেকে দশম। গত এক দশকে এখানে সাতজন সাংবাদিক হত্যার কোনো বিচার হয়নি।
‘গেটিং অ্যাওয়ে উইথ মার্ডার’ শিরোনামে প্রকাশিত সিপিজে সূচকে বলা হয়, বাংলাদেশে উগ্রবাদী ও অপরাধচক্রের সদস্যরা সাংবাদিকদের চিহ্নিত করে হত্যা করেছে।