ঢাকা ০৬ আগস্ট ২০১৯: ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে গত শনিবার নিখোঁজ হওয়া মোহনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মুশফিকুর রহমানকে সুনামগঞ্জে পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার ভোরে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের গোবিন্দপুর এলাকায় তাঁকে পাওয়া যায়। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। বাংলাদেদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির আহবায়ক ফরিদ হোসেন উদ্বারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সাংবাদিকদের জানায়, মুশফিকুর রহমান ভোরে গোবিন্দপুর এলাকার মসজিদের সামনে যান। সেখানে থাকা এক মুসল্লির কাছের তিনি কোথায় আছেন জানতে চান। এরপর তাঁর পরিচয় দেন। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি কুলেন্দু শেখর দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে পুলিশ নিয়ে গিয়ে মুশফিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা সংবাদকর্মী ফুয়াদ মনি জানান, স্থানীয় লোকজন সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তাকে খবর দেন। তিনি সেখানে যাওয়ার পর মুশফিক তার পরিচয় পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ফুয়াদ পরে মুঠোফোনে মুশফিককে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। তিনি খুবই ক্লান্ত ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে মুসল্লিরা তাকে মসজিদের ভেতর নিয়ে যান।
সদর হাসপাতালে মুশফিকুর রহমান জানান, তিনি কীভাবে এখানে এসেছেন কিছুই জানেন না। শনিবার গুলশান এলাকায় তার চোখে কোনো কিছু ছিটানো হয়। এরপর তিনি শুধু হেঁটেছেন মনে হয়েছে। একপর্যায়ে তিরি আর কোনো কিছু বুঝতে পারেননি। যখন জ্ঞান ফিরে তখন বোঝেন চোখ, হাত বাধা। কয়েকজন লোক ছিল। তিনি তাকে কেন ধরে আনা হয়েছে জানতে চান। ওই লোকজন তাকে মেরে ফেলার কথা বলে। এই তিন দিন তাকে শুধু একটি কেক ও কিছু পেয়ারা খেতে দেওয়া হয়েছে। ভাত খেতে চাইলে তাকে মারধর করা হয়। তাকে কয়েকবার মারধর করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কেন তাকে ধরে নেওয়া হয়েছে সেটি ওই লোকজন বলেনি। একবার বলেছে তাকে গুলি করে মারবে, আরেকবার বলে জবাই করবে।
তিনি সুনামগঞ্জে কীভাবে এলেন কিছুই বলতে পারেননি। গাড়ি থেকে নামানোর পর তাকে বলা হয়েছে দৌড় দিতে। এরপর তিনি দৌড়াতে থাকেন। মুশফিক বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। কেন কারা এটা করেছে আমি বুঝতে পারছি না।’
হাসপাতালের চিকিৎসক নাসির উদ্দিন জানান, তাকে বেশ মারধর করা হয়েছে। ব্যথা আছে। চোখে কোনো কিছু দেওয়া হয়েছিল। এ কারণে তিনি ঝাপসা দেখছেন। তবে বিশ্রাম নিলে এসব ঠিক হয়ে যাবে।
সুনামগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিন্নাতুল ইসলাম বলেন, আমরা ঢাকায় তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ঢাকা থেকে লোকজন আসছেন। তারা এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
সাংবাদিক মুশফিকুর রহমান ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে গত শনিবার নিখোঁজ হন। তিনি ঢাকার মিরপুরে থাকতেন। গ্রামের কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার চরগোয়ালি গ্রামে।
এদিকে মুশফিকের নিখোঁজ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাবি করেছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম বিএমএসএফ।