আজ ১লা অক্টোবর ‘আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস’। এ বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘পরিবর্তিত বিশ্বে প্রবীণ ব্যক্তির সহনশীলতা’ ইংরেজীতে ’Resilience of Older Persons in a Changing World’ আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের এই প্রতিপাদ্য বিষয়টি প্রবীণদের বঞ্চনা, বৈষম্য, অধিকারহীনতা, মর্যাদাহীনতা শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বেই তাদের এই দুরবস্থা কমবেশী বিদ্যমান। “সহনশীলতা” শুধু বিরূপতা ও প্রতিকূলতা সহ্য ও সমন্বয় করা নয়, এসব থেকে উত্তীর্ণ ও জয় করাকেও বোঝায়।
প্রবীণদের জীবনে অর্থপূর্ণ পরিবর্তনের জন্য অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রতিকূল ও বিরূপতাকে সহ্য ও উত্তীর্ণ হওয়ার সক্ষমতা প্রয়োজন। এই সক্ষমতা অর্জনে নীতিগত, কৌশলগত ও কর্মসূচিগত সহায়তা অত্যন্ত জরুরী। প্রবীণদের অর্থনৈতিক সহনশীলতা, স্বাস্থ্য সহনশীলতা, চলাফেরার সহনশীলতা, অংশগ্রহন সহনশীলতা, আন্তঃপ্রজন্মগত সম্পর্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ সহনশীলতা প্রবীণ জনগোষ্ঠির জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বিশেষ সহায়ক ভুমিকা রাখতে পারে।আমি কবির নেওয়াজ রাজ মনে করি,বাংলাদেশে প্রবীণদের সহনশীলতা বাড়াতে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী।
প্রবীণদের প্রতি যত্নশীল হওয়া খুবই দরকার। বর্তমান সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আশাতীত সাফল্য এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও সর্বোপরি আর্থিক অবস্থার উন্নতির ফলে দেশে দেশে ষাটোর্দ্ধ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের দেশে মানুষের গড় আয়ু এখন ৭০ বৎসর। কিন্তু প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তাদের সুরক্ষার জন্য সরকারি বেসরকারি বা ব্যক্তি পর্যায়ে তেমন প্রস্তুতি নেই।
আমাদের দেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেই গুলোর বেশির ভাগ,মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্য বিত্তের মধ্যে আর অসহায় গরীবদের মধ্যে ঘটছে। বৃদ্ধাশ্রমের অনেক করুণ কাহিনি বলে শেষ করা যায় না। চোখে জল আসে, খুবই দুঃখ লাগে তখনি যখন শিক্ষিত ছেলেরা মোটামুটি সচ্ছল থাকা সত্ত্বেও মা, বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়। এমনকি তাদের পিতামাতা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে দিনের পর দিন রাস্তার পানে চেয়ে থাকে কখন তাঁর ছেলে বা মেয়ে তাদের একটু দেখতে আসবে।জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যুগান্তকারী এ সিদ্ধান্তের আলোকে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ১৯৯১ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
জরিপ অনুযায়ী জানা গেছে, দেশে দেড় কোটির মতো প্রবীণ আছে। ২০২৫ সালে এদের সংখ্যা ২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। ২০৫০ সালে এদের সংখ্যা সাড়ে ৪ কোটি হয়ে যাবে।আমি একজন কলাম লেখক হিসেবে মনে করি, দেশের প্রবীণ নাগরিকদের মর্যাদাপূর্ণ বার্ধক্য নিশ্চিতকরণে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি শক্তিশালী যত্ন ও পরিচর্যা পরিকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন।
লেখকঃ কবির নেওয়াজ রাজ
এমএসএস”রাষ্ট্রবিজ্ঞান,সিসি”জার্নালিজম,এলএলবি।