মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ী ধরতে গিয়ে নড়াইল জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদস্যদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের দু’জন সদস্য আহত হয়েছেন। উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, শনিবার (৪ এপ্রিল) পৌণে একটার দিকে নড়াইলের কালিয়া উপজেলাধীন লক্ষীপুর গ্রামে অনাকাক্সিক্ষত ওই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুর পৌণে একটার দিকে খুলনা র্যাব-৬ এর স্পেশাল কোম্পানির ওয়ারেন্ট অফিসার ডিএডি হাবিবুর রহমান গোপনে জানতে পারেন কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের হারুন কাজীর পুকুর পাড়ে ইয়াবা কেনাবেচা হচ্ছে। সংবাদের ভিত্তিতে ক্রেতা সেজে তিনি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের উপ-পরিদর্শক সৈয়দ জমারত আলীর নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি দল। এ সময় মাদক উদ্ধারকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তারা মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। রাস্তার মধ্যেই র্যাব ও ডিবি পুলিশ সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। উভয়পক্ষের সদস্যরা একে অপরকে হেলমেট দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। এসময় স্থানীয় লোকজন ও পথচারীরা দূরে দাঁড়িয়ে উভয়পক্ষের মারামারি দেখতে থাকেন। র্যাব ও ডিবি সদস্যরা এসময় কাউকে ঘটনাস্থলে যেতে দেয়নি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। খবর পেয়ে রাত আটটার দিকে র্যাব ও ডিবি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে তাৎক্ষণিক উভয়পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের অবসান ঘটান।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দা বিল্লাল কাজী বলেন, ‘হঠাৎ চেঁচামেচির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাদা পোষাকধারী ডিবি ও র্যাবের সদস্যদের মারামারি করতে দেখতে পাই। উভয়পক্ষের ৮/৯ জন সদস্য মারামারিতে অংশ নেয়। আমি ও স্থানীয় বহু লোকজন দূর থেকে উভয়পক্ষের মধ্যে হেলমেট দিয়ে মারামারি করতে দেখি। এ ঘটনার পর এএসপি সার্কেল ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে বিকালে তাদের ঘটনাস্থল থেকে উভয়পক্ষকে নিয়ে যায়। এরপর রাত আনুমানিক ৮টার দিকে খুলনার ডিআইজি অফিসের এএসপি জালাল উদ্দিন ঘটনাস্থলে এসে লক্ষীপুর গ্রামের জিয়া কাজী, ইকবাল, তনু কাজীর স্ত্রী, রঘুনাথপুর গ্রামের আলমি ও আমার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন’।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘উভয়পক্ষ সিভিলে থেকে মাদক উদ্ধার করতে গিয়ে ক্রেডিট নেয়াকে কেন্দ্র করে ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত্র হয়। এ ধরনের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। উভয়পক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি প্রাথমিকভাবে সুরাহা করেছেন। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন এএসপি সার্কেল রিপন চন্দ্র সরকার ও ডিআইও ওয়ান ইকবাল’। তিনি আরো বলেন, ‘কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডিআইজি অফিসের এএসপি জালাল উদ্দিন ও কালিয়া উপজেলার সার্কেল এএসপি রিপন চন্দ্র সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন’।
এএসপি সার্কেল রিপন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মাদক উদ্ধারকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির প্রেক্ষিতে কথাকাটা কাটি হয়। এ ঘটনায় রাত পৌণে ১২টার সময় কালিয়া থানায় মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় লক্ষীপুর গ্রামের মৃত জব্বার মোল্যার ছেলে কোবাদ মোল্যা (৪২) সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ১১০ পিস ইয়াবা ও ২ পিস বাঁশের লাটি উদ্ধার করা হয়েছে’।