হাফিজুর রহমান শিমুলঃ কালিগঞ্জের আলোচীত বাবু হত্যা মামলার অন্যতম আসামী পুলিশ সদস্য আরিফকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে থানা পুলিশ। এর আগে বাবুর ডায়নী স্ত্রী সাবিনাকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশ সাবিনা খাতুনের দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ি বুধবার ভোরে তার বাড়ির পাশ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত খেজুরের কাটা, হাতুড়ি, প্লাস, রক্তমাখা জামা, লুঙ্গি উদ্ধার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন হাজরাহাটি তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত সাবিনা খাতুনের ভাই পুলিশ সদস্য আরিফ হোসেনকে আটক করে সাতক্ষীরায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, এখান থেকে আট মাস আগে একই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী মোড়লের মেয়ে দু’ সন্তানের জননী বিধবা সাবিনাকে বিয়ে করে ভাটা শ্রমিক আবিদ হোসেন মোল্লা ওরফে বাবু (২৭)। বিয়ের পরে সে ভাটার কাজ ছেড়ে দিয়ে সাবিনার ভাই নুরুল মোড়লের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতো। বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাবা মা বললেও শ্বশুর বাড়িতে থাকতো বাবু। একপর্যায়ে সাবিনা মাগুরা জেলায় কর্মরত এক বিজিবি কর্মীর সঙ্গে সখ্যতা (পরকিয়া) গড়ে তোলে। এরপর থেকে কাবিনের দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করে সাবিনাকে তালাক দিতে বলে সাবিনা, পুলিশ সদস্য ভাই আরিফ ও বোন শরিফা। বাবু তার স্ত্রীকে তালাক দিতে রাজী না হওয়ায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই অংশ হিসেবে রবিবার ৫ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসে আরিফ। সোমবার রাতের কোন এক সময় বাবুকে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার পর বাবুর গলায় ওড়না পেচিয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরপাড় লেবু গাছের ডালে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রচার দেয়। ঘটনার পরেই সুচতুর আরিফ তার কর্মস্থলে যোগ দেয়। মঙ্গলবার দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাবিনাকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের মা হোসনে আরা খাতুন বাদি হয়ে আরিফ ও সাবিনাসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৫ জনকে আসামী করে মঙ্গলবার রাতেই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সাবিনাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজে ও আরো চারজন হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করায় মঙ্গলবার ভোরে তার বাড়ির পাশ থেকে বাবুকে নির্যাতনে ব্যবহৃত খেজুরের কাটা, হাতুড়ি, প্লাস, রক্তমাখা জামা ও লুঙ্গি উদ্ধার করেছে।
কালিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা জিয়ারত আলী জানান, গ্রেপ্তারকৃত সাবিনা খাতুন তার স্বামীকে হত্যার সঙ্গে সম্পক্ত থাকার কথা উল্লেখ করে বুধবার বিকালে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। সাবিনার ভাই মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন হাজরাহাটি তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ঘাতক আরিফকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। মামলার অন্যান্য আসামীদের আটকে কালিগঞ্জ থানা পুলিশ তৎপর রয়েছেন বলে এ প্রতিনিধিকে জানান থানার চৌকস অফিসার ইনচার্জ মোঃ দেলোয়ার হুসেন।