সাতক্ষীরা প্রতিনিধি শিমুলঃ সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের পিরোজপুর মহাশ্মশানকে কেন্দ্র করে কালিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদিকে জড়িয়ে একটি মহল কুৎসা রটনা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন উপজেলার মাদকাটি গ্রামের মৃত হরেন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে চন্ডিচরন মন্ডল।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি স্বপন কুমার বিশ্বাসসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে চন্ডিচরন মন্ডল বলেন, পিরোজপুর মহাশ্মশানটি শত বছরের পুরনো। হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার দাহ কাজ এখানেই সম্পন্ন করা হয়। এই মহাশ্মশানের উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে সরকারি সহযোগিতাও পেয়ে থাকেন কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এই মহাশ্মশানের আওতার বাইরে পিরোজপুর-উকসা সড়কের চৌরাস্তার মোড়ে স্লোপিং পয়েন্টে যমুনার চর এলাকায় কালিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘মুজিব সেঞ্চুরি ওয়াটার ইকো পার্ক’ এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। উক্ত নামফলকটি চিতার স্থান থেকে ২৫০ ফুট দূরে অবস্থিত হওয়ায় তাতে শ্মশানের কার্যক্রমের কোনো প্রকার ক্ষতি বা অসুবিধার সম্ভাবনা নেই। এরপরও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কালিগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সাথে তার অফিসে বসে জানান ‘মুজিব সেঞ্চুরি ওয়াটার ইকো পার্ক’ এর নামফলক ওই স্থানে রাখা হলে তাতে যদি কোনো অসুবিধা হয় তাহলে রাস্তার বিপরীতে বসানো যাবে। পূজা উদযাপন পরিষদ নেতা সজল মুখার্জি, ডা. মিলন ঘোষ, অসিত সেনসহ অন্যরা এসব কথা শুনে সম্মতি দিয়ে চলে যান। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর সজল মুখার্জি, ডা. মিলন এবং অসিত সেনের নেতৃত্বে শতাধিক ব্যক্তি উক্ত নাম ফলকটি ভেঙ্গে ফেলেন। এ সময় তারা অপপ্রচার দেন উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদি শ্মশান দখল করে নিচ্ছিলেন বলে তারা এটি ভেঙ্গেছেন। এই প্রচারণা দিয়ে চেয়ারম্যানের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার চেষ্টা চলছে। তারা এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতির বিপক্ষে তাকে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।চন্ডিচরন মন্ডল আরো বলেন, প্রকৃতপক্ষে এই মহাশ্মশানটির উন্নয়নে উপজেলা চেয়ারম্যান তিন লাখ টাকার বরাদ্দ এনে তা দিয়ে শ্মশানের কাজে ব্যবহারযোগ্য একটি বিশ্রামাগার তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছেন। এ ছাড়াও গত ১৮ অক্টোবর উপজেলা চেয়ারম্যান এই বিশ্রামগারেরর অনকূলে আরও এক লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এই প্রকল্পটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেই। এমতাবস্থায় ‘উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদি মহাশ্মশানটি দখল করে নিচ্ছেন’ মর্মে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে তা অসত্য, মিথ্যে, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা এই অপপ্রচারে নিন্দা জানাচ্ছি এবং এর প্রতিবাদ করছি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই শ্মশানটিকে সহায়তার পাশাপাশি এ অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের নানা সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়ে কাজ করেছেন। তিনি আরো বলেন, আমার প্রায় ৩৬ বিঘা জমি ২০০০ সালে প্রায় ৩০০ পরিবার জবর দখল করে নেয়। সাঈদ মেহেদি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে ভাইস চেয়ারম্যান থাকাকালে আমার পাশে দাঁড়ান। তিনি দখলদারদের উচ্ছেদ করার ব্যবস্থা করে আমার জমি ফিরে পেতে সাহায্য করেন। অথচ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সনৎ কুমার গাইন, সেক্রেটারি ডা. মিলন কুমার ঘোষ, সহ সভাপতি সজল মুখার্জি, সাংগঠনিক সম্পাদক গোবিন্দ মন্ডল ও সদস্য অসিত সেন জমির মালিকের পক্ষে না দাঁড়িয়ে দখলকারী তরিকুল ইসলাম ও মহব্বতের পক্ষে বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে অবস্থান নেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা এ বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি। তারা পূজা উদযাপন পরিষদের কার্যক্রমের নিন্দা জানান। এসব বিষয়ে সাঈদ মেহেদি নীতিগতভাবে আমার এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ নেওয়ায় স্বার্থান্বেষী মহলটি তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় সরকার যে চাল বরাদ্দ দিতো তা উত্তোলন করে পূজা উদযাপন পরিষদের পাঁচজন কর্মকর্তা, সনৎ কুমার গাইন, সজল মুখার্জি, ডা. মিলন ঘোষ, গোবিন্দ মন্ডল ও অসিত সেন অনিয়মের মাধ্যমে আত্মসাত ও নয় ছয় করতেন। সাইদ মেহেদি ২০১৯-২০ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান হবার পর থেকে দুর্গাপূজায় বরাদ্দকৃত চাল সরাসরি মন্ডপ কমিটির হাতে দেওয়া শুরু করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন পূজা উদযাপন পরিষদের ওই পাঁচজন কর্মকর্তা। সেই থেকে তারা সাঈদ মেহেদির বিরোধীতা করে আসছেন। সম্প্রতি এর সাথে তারা মহাশ্মশানের কাছে লাগানো নামফলক ‘মুজিব সেঞ্চুরি ওয়াটার ইকো পার্ক’ এর বিষয়টিকে সামনে এনে অপপ্রচার শুরু করেছেন। ২০১৩ সালে কালিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্নস্থানে জামায়াতবিএনপির তান্ডবের সময় সাঈদ মেহেদি জনগনের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশাসনকে সহায়তা করেন। এ সময় সাঈদ মেহেদির আপ্রাণ চেষ্টায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অগণিত মানুষ এই সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা পান। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদির বিরুদ্ধে মিথ্যে অপ- প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।