ঠিক এক বছর আগে করোনাক্রান্ত দেশবাসীর পাশে দাঁড়ানো মানবিক পুলিশ হঠাৎ করেই কেন আক্রোশী থাবার আগ্রাসী পুলিশ হয়ে উঠলো? সারাদেশে নিজ নিজ উদ্যোগে এই পুলিশ সদস্যরাই তো মানবতাবোধের, ভালবাসা মমতার চাদর বিছিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের নিজস্ব সামর্থে খাবার, আশ্রয়, চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে যেভাবে অসহায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে অসংখ্য মানুষের অবলম্বন হয়েছিলেন, বেঁচে থাকতে সাহস জুগিয়েছিলেন; তারাই মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে কেন হিং¯্র বর্বরতার চুড়ান্ত প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন?
আমার জানামতে গরু মোটা তাজাকরণ স্টাইলে পুলিশের ভাবমূর্তি পূণরুদ্ধার কিংবা মানবিক পুলিশ বানানোর সরকারি কোনো প্রকল্প ছিল না, নেইও। তাছাড়া গত বছর হঠাৎ করোনার আঘাতে সরকার, প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সকলেই ছিল কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মূলত: সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অসহায় আর্তি ছিল, ‘যে যেমন পারো তেমন সাজো, নিজে নিজে বাঁচার চেষ্টা করো।’ তখন ধনাঢ্যরাও দেখেছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে উন্নত দেশে পাড়ি জমিয়ে করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকার কোনো উপায় নেই। দেশেও কোটি টাকার প্রাচীর তুলেও নিজেদের বাঁচানোর কোনো গ্যারান্টি নেই।
এ অবস্থায় প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে অনেকেই মূলত মৃত্যুর প্রস্তুতি হিসেবে শেষ মুহূর্তে পাপমোচনের জন্য ব্যকুল হয়ে ওঠে এবং সাধ্যের সবটুকু ঢেলে দেয়ারও চেষ্টা করেছেন। যদিও সে মুহূর্তেও একদল রক্তচোষা মানুষ আখের গোছাতেও পিছপা হয়নি। তারা একহাতে অসময়েই মৃত্যুর নিশ্চিতপত্র নিয়েও আরেক হাতে করোনা মৃত্যুকুপের শেষ কামাই করেছেন। কিন্তু সে সময় পুলিশ অবৈধ কামাইয়ের দিকে দৃষ্টি দেয়নি। বরং সরকারের নির্দেশনা বা প্রকল্প ছাড়া ওই মুহূর্তে পুলিশ সদস্যরা মূলত অতি পাপ খন্ডাতে অতিমাত্রায় মানবিক হয়ে উঠেছিলেন। তাহলে বর্তমানের অমানবিকতার আচরণই কী পুলিশের আসল চেহারা? নাকি সরকারি বিশেষ নির্দেশনায় অমানবিক হয়েছে পুলিশ?
করোনার প্রথম দফার আঘাতকালে দৃষ্টান্তমূলক নানা মানবিক আচরণের মাধ্যমে পুলিশের অনেক কর্মকর্তা রীতিমত হিরো বনে গিয়েছিলেন। তাদের কারো কারো জনপ্রিয়তা রাজনৈতিক নেতা এমনকি জনপ্রতিনিধিদের জনপ্রিয়তাকেও তারা হার মানিয়ে দিয়েছিলেন। এ কারণে সরকারের প্রশাসনের নানা বৈঠকেও কিছু কিছু নেতা জনপ্রতিনিধির কন্ঠে ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। তারা সরাসরি বলেই ফেলেছেন: পুলিশকে আমরা পুলিশের আচরণেই দেখতে চাই, মানবিকতা দেখানোর নামে দেশকে অপরাধের অভয়ারণ্যে পরিনত করা হচ্ছে…ইত্যাদি। তবে কী পুলিশের হিরো হয়ে ওঠায় কে বা কারা ঈর্ষনীয় হয়ে উঠেছিলেন? তারাই কী নানা কায়দা কৌশলে পুলিশকে বর্বর হয়ে উঠার পথে পা বাড়াতে বাধ্য করেছেন?
তা যেভাবেই হোক পুলিশ হঠাত করেই অতিমাত্রায় অমানবিক হয়ে উঠেছে, ফলশ্রুতিতে দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে নানা বর্বরতা হজম করতে হচ্ছে। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি পৌঁছে যাচ্ছে সাবেক জায়গায়, অসার হয়ে পড়ছে ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ বাক্যটি। যে ষড়যন্ত্রের কারণেই হোক বা আদি চরিত্রের টানেই হোক পুলিশের এ বদলে যাওয়া সচেতন দেশবাসীকে খুব বেশি আশাহত করেছে। এর দায়ভার সজ্জন ভদ্রলোক পুলিশ প্রধানকেই যে মাথা পেতে নিতে হবে….
লেখকঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমন।