মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় বিউটিশিয়ান শাম্মী (৪০) হত্যা মামলায় স্বামী ও এক স্কুল শিক্ষিকা গ্রেফতার হয়েছে। সোমবার রাতে শাম্মী আক্তারের স্বামী শেখ সিরাজুল সালেকিন (৩৩) ও শাম্মীর ভাইয়ের স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা আয়শা খানমকে (৫০) গ্রেফতার করে থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার (৯ আগষ্ট) হত্যা মামলার অভিযোগে স্বামী ও স্কুল শিক্ষিকাকে গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের নিশ্চিত করেছেন থানা পুলিশ। এর আগে গতকাল রাতে শাম্মীর ছেলে সাইম আলম (১৭) বাদী হয়ে তাঁর বাবা ও স্কুল শিক্ষিকা মামির বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় হত্যা মামলা করে।
গতকাল দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শাম্মী আক্তারের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শাম্মীর বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ছোট রাজাপুর গ্রামে। তিনি মঠবাড়িয়া শহরের কে, এম লতীফ সুপার মার্কেটের শাম্মী বিউটি পারলারের মালিক ছিলেন। গ্রেফতার আয়শা খানম শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা গ্রামের এমাদুল হকের স্ত্রী ও মঠবাড়িয়া কে এম লতীফ ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ল²ীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের ব্যবসায়ী শেখ সিরাজুল সালেকিন ঢাকায় ব্যবসা করেন। তিনি শাম্মী আক্তারের দ্বিতীয় স্বামী। ১৩ বছর আগে প্রথম স্বামী ফিরোজ আলমের সঙ্গে শাম্মী আক্তারের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ফিরোজ আলম ও শাম্মী আক্তারের দুই ছেলে আছে। দুই বছর আগে সিরাজুল সালেকিনের সঙ্গে শাম্মীর বিয়ে হয়। শাম্মী মঠবাড়িয়া শহরের থানাপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। সিরাজুল সালেকিন মাঝেমধ্যে ঢাকা থেকে মঠবাড়িয়ায় আসা-যাওয়া করতেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সিরাজুল ও শাম্মীর বিবাহবার্ষিকী ছিল। এর আগে গত রোববার সিরাজুল ঢাকা থেকে মঠবাড়িয়া আসেন। ওই দিন রাতে বিবাহবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়শা খানম ওই বাড়িতে যান। রাতে তিনি ওই বাড়িতে ছিলেন। শাম্মী গভীর রাতে সিরাজুল ও আয়শাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন। পরে বিষয়টি নিয়ে শাম্মী ও সিরাজুলের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে সিরাজুল ক্ষিপ্ত হয়ে শাম্মীর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
শাম্মীর ছেলে সাইম আলম অভিযোগে করে বলে, হত্যার দায় এড়াতে পরের দিন সকালে সিরাজুল ও আয়শা দুজন মিলে শাম্মীর লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তাঁরা হত্যার ঘটনাকে ‘হার্ট অ্যাটাক’ বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। রোববার রাতে ওই ঘটনার সময় সাইম বাসায় ছিল না বলে দাবি করেন। এদিকে সাইমের বড় ভাই একটি মামলায় কারাগারে আছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্বীপ কৃষ্ণ সাহা বলেন, গতকাল সকাল নয়টার দিকে শাম্মীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাঁর লাশ দুই স্বজন বাড়ি নিয়ে যেতে চান। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মঠবাড়িয়া থানার পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরপরই সিরাজুল সালেকিন ও আয়শা খানমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে হত্যা মামলায় তাঁদের দুজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।