কালিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলায় জাল দলিল সৃষ্টিকারী দলিল লেখক শফিকুল ইসলাম ওরফে শফি’র বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার পারুলগাছা গ্রামের মৃত সৈয়েদ আলী গাজীর ছেলে। পারুলগাছা হাজী মোড়ে মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় ভুক্তভোগীদের উদ্যোগে শতাধিক নারী পুরুষের সরব অংশগ্রহণে মানববন্ধনে জাল দলিল, ভূয়া রেকর্ড সৃষ্টি ও অন্যের নামে-বেনামে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ প্রসঙ্গ তুলে বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগী আলহাজ্ব ইদ্রিস আলী হাজারী, হানিফা হাজারী, আকছেদুর রহমান, আব্দুল আলিম হাজারী, হবি হাজারী, রফিকুল ইসলাম, হালিমা খাতুন, মারুফ হোসেন গাজী ও রেজা হাজারী প্রমুখ। বক্তারা বলেন জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে ৩ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে শফির বিরুদ্ধে। উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের পারুলগাছা গ্রামের মৃত শুকচাঁদ হাজারীর ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী ইদ্রিস আলী, মৃত গহর আলীর ছেলে অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আলহাজ্ব জি এম কওছার আলী ও মরহুম অজিহার রহমানের ছেলে জিএম আকছেদুর রহমান বাদী হয়ে সাতক্ষীরার বিজ্ঞ আমলী ২নং আদালতে মামলা দায়ের করেন। শফিকুল ইসলাম একজন বহুরূপি প্রতারক দলিল লেখক। তিনি বর্তমানে দলিল লেখকের লাইসেন্স নিলেও এর আগে সেটেলমেন্টের মুহুরী ও বিভিন্ন ধরণের দালালী পেশায় জড়িত ছিলেন। সেটেলমেন্ট চলাকালে ইদ্রিস হাজারী প্রবাসে থাকার কারণে তার এস,এ রেকর্ডিয় জমি হালজরিপে রেকর্ডভুক্ত করানোর জন্য বললে তিনি রেকর্ড করানোর জন্য বিভিন্ন খরচ বাবদ ৫৫ হাজার টাকা গ্রহণ করে। কিন্তু তিনি তঞ্চকতার মাধ্যমে নিজ ডিপি খতিয়ানে উক্ত জমি রেকর্ড করিয়ে নেয়। দেশে ফিরে বিষয়টি জানার পর তাকে ৩০/৩১ ধারায় আপিলের মাধ্যমে রেকর্ড সংশোধন করে দিতে বললে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নামে রেকর্ড বজায় রাখে। একপর্যায়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে এবং তার কাছে এহেন প্রতারণার কারণ জিজ্ঞাসা করলে উত্তেজিত হয়ে মামলা মোকদ্দমা দিয়ে নাজেহাল করার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। সর্বশেষ গত ২৩/০৬/২৩ তারিখে সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে উক্ত প্রতারণার বিষয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারপিট করতে উদ্যত হয় এবং হাতে থাকা একটি মোবাইল ফোন ও পাঞ্জাবীর পকেট থেকে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পাঞ্জাবী ছিড়ে দেয়। তারা আরও বলেন, এলাকায় জাল শফিক নামে পরিচিত শফিকুল ইসলাম রাজস্ব অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে ৬৬৭/২০১৯ সৃষ্টি করে এবং পরবর্তীতে ওই দলিল হতে ৪৬৫৫/২০১৯ সৃষ্টি করে। এছাড়া গত ১০/০২/৮৮ তারিখে উক্ত শফিকুল ইসলাম ৫৮০নং রেজিস্ট্রি দলিলে বিক্রির পর প্রতারণা ও জালিয়াতি করে একই সম্পত্তি ০৯/০৭/৯৩ তারিখে ৩৭/২০১৯ নম্বর, ০৩/০৫/৯৮ তারিখে ২২৪৮/৯৮ নং, ৩০/১০/১৮ তারিখে ৪০৪৯/১৮নং জমি জালিয়াতির মাধ্যেম বিক্রয় করে। শফিকের জালজালিয়াতির প্রতিবাদ করায় তিনি ইতোমধ্যে আরও কয়েকজনের নামে সিআর ২৮২/২৩ নামে একটি হয়রানি মূলক মামলা করেছেন। নিজ নামে হাল রেকর্ডকৃত ২২ শতক জমি শফিকুল ইসলাম প্রথমে পারুলগাছা গ্রামের জিএম আবুল কাশেমের ছেলে কুয়েত প্রবাসী জাহিদুর রহমানের নামে ভূয়া রেকর্ড তৈরী করে। পরবর্তীতে ভূয়া খতিয়ান দেখিয়ে সেই জমি শফিকুল ইসলাম নিজ সেরেস্তা থেকে জি এম জাহিদুর রহমানকে দিয়ে জনৈক আব্দুল বারীর নিকট বিক্রি করায়। শফিকুল ইসলাম জাহিদের কাছ থেকে খতিয়ান রেকর্ড করিয়ে দেয়ার নামে বড় অংকের টাকা গ্রহণ করে।কুয়েত থেকে বাড়ি আসার পর শফিকুল ইসলাম জাহিদকে জাল রেকর্ড সরবরাহ করেছিল এজন্য না বুঝে ৫ শতক জমি আব্দুল বারীর নিকট হস্তান্তর করে সে। শফিকুল ইসলাম ওই রেকর্ড যে জালিয়াতি করে জাহিদকে দিয়েছিল তা পরবর্তীতে বুঝতে পারে।তিনি জাহিদকেসহ অনেক সরলমনা ব্যাক্তিকে ঠকিয়েছে। জানাগেছে, হাজী ইদ্রিস আলী হাজারী ও জিএম কওছার আলীর দায়েরকৃত দু’টি মামলার তদন্তভার কালিগঞ্জ সাব- রেজিস্ট্রারের উপর অর্পণ করেছেন বিজ্ঞ বিচারক। তবে দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও অজ্ঞাত কারণে কালিগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-রেজিস্ট্রার মঞ্জুরুল ইসলাম তদন্তকাজে গড়িমসি করছে।আরেক মামলার বাদী আকছেদুরের রেকর্ড সংশোধনের নামে রেকর্ড সংশোধন করিয়ে দেয়ার নাম করে নগদ ২০ হাজার টাকা নিয়ে ভূয়া খতিয়ান সরবরাহ করেছে শফি। এঘটনার প্রতিবাদ করলে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তিনি এব্যাপারে প্রতিকারের জন্য বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হলে বিজ্ঞ বিচারিক হাকিম অভিযোগ আমলে নিয়ে বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআই, সাতক্ষীরাকে নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তীতে পিবিআই সরেজমিন এ ঘটনার তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে। মানববন্ধনে শফি’র মাধ্যমে হয়রানীর স্বীকার ব্যাক্তিবর্গসহ সচেতন মানুষ অংশগ্রহণ করেণ। তাদের দাবী শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ।