এক শিশি জলপাই তেল আর ক্যাকটাসের গল্প
বাসেম ইউসুফ
মিশরীয় লেখক, প্রযোজক, সার্জন, চিকিৎসক, কমেডিয়ান, মিডিয়া সমালোচক এবং টিভি উপস্থাপক বাসেম ইউসুফ এর A story of Olives and Cactus হয়তো ভাল লাগবে, তাই অনুবাদ করলাম। লেখাটা খুব বড় নয়, সময় পেলে পড়ার অনুরোধ রইলো।
“যেখানেই ক্যাকটাস দেখবে, ধরে নিবে ওখানে একদা ফিলিস্তিনি গ্রাম ছিল।” ওরা ঠিক এটাই বলবে তোমায়, যদি কখনও পশ্চিম তীরে (জর্ডান নদীর) যাও।
ইজরাইল, ঐ জমিনের দখল বদলাতে দশকের পর দশক ধরে ওখানকার গ্রাম শহরগুলোকে বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, বসতির চিহ্নটুকুও মুছে দিচ্ছে মাটি থেকে। কিন্তু সমস্যা হলো ক্যাকটাসগুলো বারবার ফিরে আসছে, নতুন করে গজিয়ে বেড়ে উঠছে সেখানেই। দেশটাকে ওরা যতই ধ্বংস করুক, নষ্ট করুক মাটিকে; আর নিজেদের নাম পত্তন করুক, ক্যাকটাস পুনরায় গজিয়ে উঠছেই।
আমার বান্ধবী তার পশ্চিম তীরের গ্রাম থেকে সদ্য ফিরেছে, আমার জন্য উপহার এনেছে ওখানকার স্থানীয় মানুষের পেষাই করা খাঁটি জলপাইয়ের তেল। ” দোকান থেকে কেনা বাণিজ্যিক কোম্পানির জিনিস ভুলে যাও, গ্রামে আমরা নিজেরাই তেল বানাই।”
ওরা জলপাই পেষাই করে পাথরের কলে, এক রকম পরিষ্কার খড়ের থলে ব্যবহার করে সেই পেষাইয়ের কাজে, এই একই পদ্ধতি একশো, দুশো, চারশো হয়তবা ছশো বছর ধরেই চলে আসছে, ঐ গাছগুলোর মতোই সেকেলে কায়দায়। যদি ওদেশের কোনো পণ্য নাও, তবে তার শেষ পর্যন্ত নিংড়ে নিবে, একেবারে খাঁটি সবুজ সোনা মিলবে।
জীবনের সকল নিরাময়ের যেন এক জাদুকরী তরল এই জলপাই তেল। “একটু তেল লাগিয়ে নাও” এটাই হলো ফিলিস্তিনে সবকিছুর উত্তর। ক্ষুধা লেগেছে? একটু তেল খাও। শরীর খারাপ? গায়ে একটু তেল মালিশ করে নাও। দুনিয়াটাকে আরেকটু সহ্য করতে চাও? আরেকটু তেল…!
এই পৃথিবীর মতোই প্রবীণা রয়েছে তোমার হাতে, ওগুলো কেবল জলপাই গাছ নয়, ওরা তোমার পরিবারের অংশ। ওরা তোমার ক্ষুধার জন্য আছে, ওরা তোমার লালনপালনের জন্য আছে। কী করে তুমি পরিবারের সদস্যের শিকড় উপড়ে ফেলতে পারো আর তার মাটিকে বলতে পারো তোমার! আমারতো বোধে আসেনা! গাছেরাও রাজী নয় তাতে, আর ক্যাকটাসেরা তো মোটেই মেনে নেবে না তা। হতে পারে আমরা সবাই ভুল বুঝছি।
হয়তোবা, এই জলপাই গাছ ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের কোনও বর্ধিষ্ণু শাখা নয় বরং ফিলিস্তিনিরাই এ ভূমির একটা বর্ধিত অংশ। ওরা জলপাই গাছের মতো, তোমরা তাদের আঘাত করতে পারো,তাদের পিষ্ট করতে পারো, দুমড়ে মুচড়ে ছিবড়ে ফেলতে পারো, আর ঠেলে সরিয়ে দিতে পারো কোনও মানবিক সীমার ওপারে। তবুও তারা মরবে না। পেষাই করা জলপাইয়ের মতো সবুজ সোনার জন্ম দেবে। প্রতিটা মৃত্যু থেকে, নিযুত জীবন জন্ম নেবে। আর তাদেরই যন্ত্রণা বেদনা হয়ে উঠবে আমাদের নিরাময়ের জাদুপানীয়।
আর যদি তোমরা তাদের শিকড় উপড়ে তুলতে চাও, তবুও তারা চলে যাবে না। তোমরা ভাবতে পারো, হয়তো যাবে, কিন্তু ওরা ফিরে আসবেই ক্যাকটাসের মতো। তোমাদের অস্বীকার করতে, তোমাদের বিপক্ষে দাঁড়াতে, শত অত্যাচার সয়ে তোমাদেরই বিঁধতে।
ওরা ওখানেই ছিলো, আছে, চিরদিন থাকবে।
মূল: বাসেম ইউসুফ
ভাষান্তর : হাসান হাফিজুর রহমান।
২৭ কার্তিক ১৪৩০