কবি ও কবিতা: কবি মারুফুল ইসলাম
পৃথিবীর সকল কবিই তাঁর কবিতার সঙ্গে এক আত্মিক অথচ সংবেদনশীল জীবনের পরতে পরতে উপলব্ধি ও অতৃপ্ত খুঁড়ে খুঁড়ে ভীষণ এক মায়া ও দ্রোহের ছবি নির্মাণ করে চলেন কবিতার পঙক্তিতে পঙতিতে। প্রেম, প্রকৃতি, নিঃসঙ্গতা, লোক- পুরাণ, সামাজিক ও রাষ্ট্রিক যন্ত্রণার এক অভূতপূর্ব প্রকাশ, আমরা লক্ষ্য করি, কবি মারুফুল ইসলামের কবিতায়।
১৯৬৩ সালের ২৯ মার্চ ব্রাহ্মণ বাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন কবি মারুফুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে তিনি স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি শিক্ষা জীবনের কৃতিত্বের জন্য বিশেষ সম্মান সূচক রাষ্ট্রপতি পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃক ‘শিশু একাডেমি “শিশু সাহিত্য” পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়াও ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে” বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে” ভূষিত করা হয়।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আশির দশকের অন্যতম মেধাবী কবি মারুফুল ইসলাম। তিনি কবিতা, গান, প্রবন্ধ, গঠনমূলক সমালোচনা সর্বক্ষেত্রেই তাঁর পারঙ্গমতার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর কাব্যগ্রন্থের বিপুল সম্ভার নিঃসন্দেহে বাংলা কবিতার সংগ্রহ শালাকে সমৃদ্ধ করেছে।
কবি মারুফুল ইসলাম- কিছু কবিতা
আপনার জন্মদিন
আপনার জন্মদিনটাকে নিজের জন্মদিন ভেবে ভুল করি
ভুল করি নাকি ঠিক করি
আমার তো কেবলই মনে হয় আপনার জন্মদিনটাই আমার জন্মদিন
আমাদের সকলের জন্মদিন
প্রতিটি বাঙালির জন্মদিন
আমাদের এই সোনার বাংলার জন্মদিন
এমনিতে আমি রাত দশটায় ঘুমিয়ে পড়ি
ঘুমে আমার দুচোখ লাল হয়ে আসে
কিছুতেই জেগে থাকতে পারি না রাতজাগার প্রগাঢ় প্রবর্তনায়
অথচ সতেরোই মার্চ রাত বারোটাতেও আমার সাদাকালো চোখ থাকে নিদ্রার নিয়ন্ত্রণমুক্ত
আমার স্বাধীন রক্তপ্রবাহ থাকে বর্ষার প্রমত্তা পদ্মার স্বভাবে প্রগলভ
শরীরের প্রতি কোষে কোষে বাজে শরতের বাঁশি
হৃদয়নন্দনবন রঙিন হয়ে ওঠে বসন্তের প্রিয় পুষ্পগুচ্ছে
এ রাতে তিথি না-থাকলেও চাঁদ তার পূর্ণিমারূপ মেলে ধরে
রাত পোয়ালে শিশুসূর্য এসে উঁকি দেয় শ্যামল বাংলাদেশের দক্ষিণ জানালায়
প্রতি কণ্ঠে বাজে রবীন্দ্রসঙ্গীত
যেদিন ঘরে ঘরে খুলে যায় দ্বার
যেদিন সূর্য-ওঠা সফল হয় সবার
না, সেদিন শুধু আপনার জন্মদিন নয়
সেদিন আমারও জন্মদিন
সেদিন আমাদের সম্মিলিত জন্মদিন
আপনার জন্মদিন মানে
আঁধার পার হয়ে অভিষেক স্বাধীনতার
আপনার জন্মদিন মানে
সোনার ঘটে আলোক ভরে অভিষেক মানবতার
চলা
তোমার আকাশভরা জ্যোৎস্না
আমার উঠোন খালি
আসন পেতে বসতে গেলে
টানে চোরাবালি
ক্লান্ত দুটো পায়ের পাতা
কোথায় রাখি বলো
চোখের পাতায় ঘুমের ছায়া
আবছা টলোমলো
ধূসর পাণ্ডুলিপির ভাঁজে
নতুন নিমন্ত্রণে
কয়েক দশক উথালপাথাল
বোধের বিবর্তনে
তোমার বাতাসভরা বাষ্প
শুকনো আমার গলা
আবেগ থেকে জন্মেছে বেগ
অনন্ত তাই চলা
বাঁচি মৃত্যু-দস্তখতে
লকডাউনে রাত্রি নামে
আমার দমবন্ধ ঘরে
নিত্যনব বর্বরতা
ঘটে তখন গলির মোড়ে
অভিধানের কু-বিশেষণ
কার প্রাপ্য ন্যায্যতায়
পণ্য যে সে বিক্রেতাও
অবাক অবিভাজ্যতায়
ক্রমান্বয়ে পার হয়েছি
সত্য ত্রেতা আর দ্বাপর
কলি যুগের সম্প্রসারে
কাফন পরিধেয় কাপড়
কবর থেকে লাশ উঠছে
আসছে ওরা মিছিল নিয়ে
বিচারহীন সংস্কৃতির
জবাবদিহি রয় লুকিয়ে
কালের চাকা চক্রবালে
অতীত থেকে ভবিষ্যতে
বিজ্ঞাপনে স্বদেশভূমি
বাঁচি মৃত্যু-দস্তখতে