লিয়াকত হোসেন, রাজশাহী: রাজশাহী বাজারগুলোতে আজ মঙ্গলবার বিকেল থেকে লবণ নিয়ে হুলুস্থুল কান্ড শুরু হয়েছে। জানা যায়, সাহেব বাজারের এক একটি দোকানে এক থেকে দেড় ঘণ্টায় ১০০ বস্তার বেশি লবণ বিক্রি হয়েছে।
লবনের বাজার স্বাভাবিক আছে বললেও ক্রেতারা শুনছেন না। তারা বাজারের একেকটি মুদি দোকানকে মৌচাকের মতো ঘিরে ধরছেন। তবে বাজারের টান দেখে দুএকজন দোকান মালিককে লবণ গুদামে মজুত করতেও দেখা গেছে। এই অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই ব্যবাসায়ীকে আটক করা হয়েছে।
রাজশাহীর বাজারে প্যাকেটজাত প্রতি কেজি লবণের দাম ৩৫ টাকা । ক্রেতার ভিড় দেখে কোনো দোকানি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি নেওয়া শুরু করেছেন।
আজ বিকেল ৫টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার এলাকায় অবস্থিত মুদি দোকান শাহজাহান ব্রাদার্স এর সামনে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ২০-৩০ জন ক্রেতা লবণ কেনার জন্য দোকানের সামনে ভিড় করছেন। ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন তারা। প্যাকেটের গায়ে ৩৫ টাকা লেখা লবণ বাজারে ৩০ টাকা করে বিক্রি হয়। ক্রেতার ভিড় দেখে এই দোকানে বিকেলে ৫ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তারা আবার কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে দিলেন। ৩০ টাকা কেজির লবণ তারা ৪০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন। তারপরেও দোকানে ভিড় কমেনি।
রাজশাহী বড় মুদি দোকান মোহিনী ট্রেডার্সের সামনে শতাধিক ক্রেতাকে ভিড় করতে দেখা যায়। দোকানে লবণের মূল্যের তালিকা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতি কেজি লবণ ৩০ টাকা। তারা সেই দামেই বিক্রি করছেন। তবু ক্রেতার ভিড় কমছে না।
গৃহিনী লিমা ৪ কেজি লবণ কিনলেন। কেন এত লবণ কিনলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই বলছে কালকে থেকে লবণের দাম বেড়ে যাবে সেই জন্য কিনে রাখলেন। নিলুফা নামের একজন চাকুরিজীবী রাজশাহী শহরে একটি প্রশিক্ষণের জন্য এসেছেন। তিনি বিকেলে বাজারে বেড়াতে বের হয়েছিলেন। লবণের দাম বেড়ে যাওয়ার গুজব শুনে তিনিও ৮ কেজি লবণ কিনে নিয়েছেন।
মোহিনী ট্রেডার্স এর এক কর্মচারী জানালেন, তারা মঙ্গলবার বিকেলে এক ঘণ্টায় ১০০ বস্তার বেশি লবণ বিক্রি করেছেন। দোকানের অপর একজন কর্মচারী আরও ৫০ বস্তা লবণের ফরমায়েস পাঠালেন। সেখানে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, অনবরত গুদাম থেকে লবনের ভ্যান দোকানে আসছে।
মহানগরীর শিরোইল কাঁচা বাজার এলাকার একজন চা দোকানি ১০ কেজি লবন কিনেছেন। ওই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, লবণ কিনতে যারা এসেছেন তাদের প্রায় ৯০ শতাংশই নারী। তারা মুদি দোকানের সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন।
খবর পেয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম আজ বিকেলে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই ব্যবাসায়ীকে আটক করেছেন। বিকেলে এ প্রতিবেদন পাঠানো পর্যন্ত অভিযান চলছিল। আটক দুই ব্যবাসায়ীর নাম মানিক ও আজমল হোসেন। ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, বাজারে লবণের কোনো সংকট নেই। এটা এক ধরণের গুজব। তিনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত লবণ না কেনার পরামর্শ দেন। কোথাও দাম বেশি চাইলে প্রশাসনকে জানাতে বলেন।
এদিকে এই খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে ১৪ টাকা কেজির খোলা লবণ ৪০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়েছে। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নর্দাস গ্রামের সুকুমার প্রামাণিক জানান, তিনি আগের দিন এক কেজি খোলা লবণ ১৪ টাকা কিনেছিলেন। লবণের দাম বাড়ার খবর শুনে মঙ্গলবার বিকেলে সেই লবণ ৪০ টাকায় কিনেছেন। তিনি জানান, তাদের এলাকায় প্যাকেট লবণের দাম ১০০ টাকা হাঁকছেন দোকানিরা।