লিয়াকত হোসেন, রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ এনে তার অপসারণ দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের একাংশ।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’-ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব অভিযোগ করেন।
তবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগের কোন প্রমাণ দেখানো হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি সুলতান-উল-ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুস সোবহান দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পরে ৪৭৫ তম সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালা ব্যাপক পরিবর্তন করে নিজের মেয়ে ও জামাইকে ট্যুরিজম হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ও আইবিএতে নিয়োগ দিয়েছেন। তাছাড়া আটটি বিভাগের ২৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন যাদের অনেকের আগের নীতিমালায় আবেদন করার যোগ্যতায় ছিল না। স্বজনপ্রীতি অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অনেক অ্যাডহক নিয়োগ দিয়েছেন যারা প্রকৃত অর্থেই অযোগ্য ও নিকটাত্মীয়।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, উপাচার্য নিজের কন্যা সানজানা সোবহানকে ২০১৮ সালে নতুন টুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ও জামাতা বগুড়ার বিএনপি-জামাত পরিবারের সন্তান এটিএম শাহেদ পারভেজকে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) শিক্ষক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সর্বজন প্রশংসিত ও সরকার সমর্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালাকে চরমভাবে নিম্ন পর্যায়ে টেনে নিয়েছেন।
নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী, প্রার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মেধাতালিকায় প্রথম হতে সপ্তম স্থানে মধ্যে থাকতে হবে। কিন্তু বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে তার কন্যা ও জামাত আর মেধাক্রম ছিল যথাক্রমে ২১তম ও ৬৭তম। আইবিএতে দরখাস্তকারীদের ৬৬ জনের সিজিপিএ ৩.৫ এর উপরে। পূর্বে নীতিমালা অনুসারে তার জামাইয়ের দরখাস্ত করার যোগ্যতাও ছিল না। মেয়ে-জামাইয়ের জন্য বাণিজ্য অনুষদের যোগ্যতা সিজিপিএ ৩.৫ থেকে ৩.২৫ পর্যায়ে নামিয়ে আনেন।
আরও বলা হয়, উপাচার্য ৪৮১ তম সিন্ডিকেটে সেকশন অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা উঠিয়ে দিয়েছেন। ৪৮৭ তম সিন্ডিকেটে সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারী নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে ৩৫ বছর করেছেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও বিধি মোতাবেক না করে নিকটাত্মীয়সহ অর্ধশতাধিক এডহক ও মাস্টাররোল নিয়োগ দিয়েছেন। এসব অন্যায় তিনি করেছেন নিয়োগ-বাণিজ্য স্বজনপ্রীতি এবং একচ্ছত্র ক্ষমতা দেখানোর জন্য।
এছাড়া লিখিত বক্তব্যে উপাচার্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির আদেশ অমান্যকরণ, উপাচার্য চৌধুরি মো. জাকারিয়াকে নিয়োগ পাইয়ে দিতে রাষ্ট্রপতির কাছে অসত্য তথ্য প্রদানসহ বিভিন্ন নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুন্নবী সামাদী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক একরাম উল্লাহ, আইন বিভাগের সভাপতি বিশ্বজিৎ চন্দ, প্রাণ রসয়ান ও অনুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ।