উজ্জ্বল রায়, নড়াইলঃ নড়াইলে সম্প্রীতির বন্ধনে যুক্ত হলেন দুইগ্রামবাসী দ্বন্দ্ব-সংঘাত ভুলে বুকে বুক রাখলেন প্রতিপক্ষরা হানাহানি ভুলে মাশরাফির কাছ থেকে উন্নয়ন কাজ আদায় করে নিন। ১৬০তম এলাকায় সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করলেন নড়াইলের পুলিশ সুপার।
হাতে হাত, বুকে বুক মিলিয়ে সম্প্রীতির বন্ধনে যুক্ত হলেন বিবাদমান দুইপক্ষের লোকজন। চারিদিকে মুহুর্মুহু করতালি। সবার মুখে হাসি-খুশি ভাব। এ চিত্র নড়াইলের কাশিপুর ইউনিয়নের গন্ডব ও চালিঘাট এলাকার। গতকাল সন্ধ্যায় লোহাগড়ার চালিঘাট ব্রিজ এলাকায় এ দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জেলা পরিষদ সদস্য গন্ডব গ্রামের সুলতান মাহমুদ বিপ্লবের সাথে একই গ্রামের মিরাজ মোল্যার সমর্থকদের কয়েক বছর ধরে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩১ জানুয়ারি বিকেলে গন্ডব গ্রামের বটতলা এলাকায় বিপ্লবের লোকজন প্রতিপক্ষ মিরাজ মোল্যাসহ তার লোকজনকে মারধর করে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০জন আহত হন। এছাড়া ১৫টি বাড়িঘর ও দু’টি দোকান ভাঙচুরসহ লুটপাটের ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষের ভয়ে মিরাজ মোল্যা গ্রুপের পুরুষেরা ঠিকমত বাড়িঘরে যেতে পারছিলেন না। আর বাড়ির নারী ও শিশুরা ছিলেন আতঙ্কের মধ্যে। এ কারণে গন্ডব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতও কমে যায়। এ পরিস্থিতিতে এলাকায় শন্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় দুইপক্ষের লোকজনের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টির উদ্যোগ নেন নড়াইলের পুলিশ সুপার। ফলশ্রুতিতে বুধবার বিকেলে সম্প্রীতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে গন্ডব ও চালিঘাট এলাকার দুইপক্ষের মাতবর সুলতান মাহমুদ বিপ্লব ও মিরাজ মোল্যাসহ উভয়পক্ষের ১০জন একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ভুলে সম্প্রীতির বন্ধনে মিলিত হন। তারা আর দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়াবেন না-মর্মে শত শত মানুষের সামনে অঙ্গীকার করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার)। সভাপতিত্ব করেন লোহাগড়া থানার ওসি আলমগীর হোসেন।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার বাবা গোলাম মোর্ত্তজা স্বপন, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী আলাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মসিয়ুর রহমান, সহ-সভাপতি ফয়জুল হক রোম, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান, নোয়াগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম কালু, জয়পুর ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন, কাশিপুর ইউপি সদস্য সলেমান শেখ, লোহাগড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমানুল্লাহ আল বারী, লাহুড়িয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম প্রমুখ। পরিচালনা করেন লোহাগড়া থানার এসআই মিলটন কুমার দেবদাস।
এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষেরা জানান, গন্ডব ও চালিঘাট গ্রামে অনেক আগে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হলেও প্রায় ১৫ বছর ধরে শান্ত পরিবেশ বজায় ছিল। প্রায় দুই বছর আগে আবার অশান্ত হয়ে ওঠে এলাকাটি। জেলা পরিষদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বিপ্লবের ইন্ধনে গ্রামটি অশান্ত হয়ে উঠে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সুলতান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, আমরা এলাকায় শান্তি চাই। সেই লক্ষেই দ্বন্দ্ব-সংঘাত ভুলে দুইপক্ষের লোকজন সম্প্রীতির বন্ধনে মিলিত হয়েছি। অপরপক্ষের মাতব্বর মিরাজ মোল্যা বলেন, আমরা এলাকায় গন্ডগোল চাই না। তবে প্রায় দুই বছর ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন আমাকে এবং আমার লোকজনকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। এখন দ্বন্দ্ব মিটে যাওয়ায় খুশি হয়েছি। এই মীমাংসা যেন ঠিক থাকে।
কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন স্যারের উদ্যোগে গন্ডব ও চালিঘাট এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এতে চেয়ারম্যান হিসেবে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি। এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে, সেই প্রত্যাশা করছি।
লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী আলাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মসিয়ুর রহমান ও সহ-সভাপতি ফয়জুল হক রোম বলেন, আমাদের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা হানাহানি, মারামারি পছন্দ করেন না। তিনি উন্নয়নে বিশ্বাসী। তাই লোহাগড়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রমসহ অনেক উন্নয়ন কাজ হাতে নিয়েছেন তিনি। আজ থেকে আপনারা (গন্ডব ও চালিঘাট গ্রামবাসী) শপথ করুন, আর দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও মারামারি করবেন না।
নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার বাবা গোলাম মোর্ত্তজা স্বপন বলেন, আপনাদের এমপি শুধু এলাকার উন্নয়ন চান। দয়াকরে হানাহানি ভুলে তার (মাশরাফি) কাছ থেকে উন্নয়ন কাজ আদায় করে নিন। আপনারা আর কখনো দ্বন্দ্বে জড়াবেন না।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, গন্ডব ও চালিঘাট এলাকায় দুইপক্ষের দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনের মধ্য দিয়ে ১৬০তম এলাকায় সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হলো। এর আগে নড়াইলের আমাদা, মল্লিকপুর, চৌগাছা, শড়াতলা, দৌলতপুরসহ জেলার ১৫৯টি গ্রামে দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গন্ডব ও চালিঘাট এলাকার লোকজন আজ থেকে সম্প্রীতির বন্ধনে যুক্ত হলেন। এরপর থেকে কেউ আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুষ্ঠানে গন্ডব, চালিঘাট, বাহিরপাড়া, এড়েন্দাসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বিভিন্ন পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।