একদিন এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক পার্কের মাঝ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অনুমান বছর ছয়েক বয়সি একটা মেয়েকে পার্কের কাঁদতে দেখে তার দিকে এগিয়ে গেলেন। মেয়েটি তার প্রিয় পুতুলটা পার্কে খেলার সময় হারিয়ে অঝোরে কাঁদছে। কান্না দেখে মায়ায় পড়ে গেলেন তিনি। মেয়েটির সাথে তিনিও খুঁজতে শুরু করলেন। অনেক খোঁজার পরও কোথাও না পেয়ে পরদিন আবার এক সাথে পুতুল খোঁজার প্রমিজ করে সেদিনের মতো বিদায় নিলেন তিনি…
পরদিন আবার পার্কে দেখা হলো তাদের, কিন্তু ফলাফল আগের মতোই। মেয়েটির সরলতা যেন বদলে এই অকৃতদার’কে। একসময় সে তাকে একটা চিরকুট দেখিয়ে বললো, খুকি তোমার পুতুল চিঠি লিখেছে, প্লিজ আমার জন্য কেঁদোনা, দুনিয়া দেখতে বের হয়েছি, যখন যা দেখবো তা তোমাকে লিখে জানাবো…
তারপর প্রতিদিন তাদের সেই পার্কে দেখা হতো, প্রত্যেকদিন নতুন নতুন চিঠি এনে আজানা দেশ আর শহরের গল্প তাকে শোনাতেন। মেয়েটিও আবাক হয়ে গল্প শুনতো..
এভাবে অনেক দিন যাওয়ার পর একদিন ভদ্রলোক দোকান থেকে নতুন একটা পুতুল কিনে এনে মেয়েটিকে দিলেন। এটা তো আমার সেই পুতুল না, বললো মেয়েটা। আসলে খুকি তোমার পুতুল আগেই চিঠি লিখেছিলো অনেক জার্নি তার চেহারা বদলে দিয়েছে। সেদিন অনেক অভিমান করে মেয়েটি নতুন পুতুল নিয়ে বাড়ি চলে গেলো।
এর কিছুদিনের মধ্যেই সেই লোকটি মারা যায়, তাদের আর কোনদিন দেখা হয়নি…
বেশ কয়েক বছর পর, মেয়েটি বেশ বড় হয়েছে, একদিন পুরাণ জিনিস পত্রের ভেতর সেই পুতুলটা খুঁজে পেলো, একে একে মনে পড়তে লাগলো ছোটবেলার মজার গল্প গুলো। পুতুলের জামার ভেতর ছোট্ট একটা চিরকুটও পেলো, পার্কের সেই আংকেলটার লেখা,
“যা তুমি ভালোবাসো, তা হয়তো একদিন হারিয়ে যাবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত, কোন একদিন তা আবার ফিরে আসবে হয়তো ভিন্ন কোনরুপে….♥
লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির আইন প্রশিক্ষক হাসান হাফিজুর রহমান।